মাদারীপুরের শিবচরের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে সংকটাপন্ন। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন।
প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ঘাটতি স্কুল পরিচালনা ও শিক্ষার মানে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
দারিদ্র্য বিমোচনের মূল হাতিয়ার শিক্ষা। কিন্তু শিবচর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তব চিত্র বিপরীত দিকে ইঙ্গিত করছে। ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১২৩ জন এবং সহকারী শিক্ষক আছেন ৮৯৬ জন। শিক্ষার মান ও ক্লাস নিয়মিত রাখার জন্য এই ঘাটতি মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
শিবচর প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ২৯,৩৫৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক ও ছয়জন (৬) সহকারী শিক্ষক থাকা উচিত। তবে বাস্তবে প্রধান শিক্ষক আছেন মাত্র ১২৩ জন এবং সহকারী শিক্ষক ৮৯৬ জন।
৭টি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৫ জন। ফলে মনিটরিং, শিক্ষকদের উপস্থিতি, পাঠদান ও শিক্ষার মানোন্নয়ন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা জানান, শিক্ষক স্বল্পতার মধ্যেও অফিসিয়াল কাজের কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ড. নুরুল আমিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এখলাস উদ্দিন চুন্ন বলেন, 'যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মূল হলো প্রশাসন। প্রধান শিক্ষক কেবল প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, তিনি বিদ্যালয়ের চালিকা শক্তি। কাজেই নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা আশা করা যায় না।'
শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, 'সংবিধান ও শিক্ষা নীতিতে সবার জন্য সমান শিক্ষার নিশ্চয়তা বলা আছে। কিন্তু গ্রামে পড়াশোনা করার জায়গাগুলোতে ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে দুর্বল। আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ খুবই খারাপ।'
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা জানান, সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত পদোন্নতি প্রধান শিক্ষক সংকট সমাধানে বাধা দিচ্ছে।
সহকারী শিক্ষক সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম রবিউল বলেন, 'মামলার কারণে পদোন্নতি স্থগিত আছে। রায় হলে শিগগিরই প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং সংকট কমবে।'
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রবীন্দ্রনাথ দত্ত জানান, 'শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় নিয়মিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে, যাতে দ্রুত সমাধান করা যায়।
এসআর