এক ফুঁ দিয়েই যেকোন জঠিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা সারেন। সর্বরোগের চিকিৎসা দেন তিনি। চিকিৎসার জন্য কোন ফি নেননা, তবে চিকিৎসা নিতে আসা সহজ সরল রোগীদের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এমনকি লাখ টাকায় চুক্তি করার তথ্য ও রয়েছে।
বলছিলাম চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের কবিরাজ শাহনেওয়াজের কথা। প্রকৃত নাম আব্দুল গফুর হলেও স্হানীয়ভাবে তিনি শাহনেওয়াজ বৈদ্য নামে পরিচিত।
তার বাড়ি উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বশির মিস্ত্রীপাড়া, বাবা খুলু মিয়া ছিলেন একজন দিনমজুর।
কয়েক বছর আগেও মানুষের বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে খাটতেন। কখনো ধান কাটা, কখনোবা মাটি কাটার কাজ করতেন। অবসরে ধানক্ষেতে কিংবা পাহাড়ে বসে গাইতেন পুঁথি। কিন্তু ভিন্ন এক পথ অবলম্বন করে বদলে যায় তার জীবন, কয়েক বছরের মধ্যে বনে যান কোটিপতি।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বৈদ্যগিরি করে অর্ধকোটি টাকায় করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। রয়েছে গরুর খামার, হালচাষের ট্রাক্টর, কৃষি জমি, রয়েছে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ব্যালেন্স ও।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহনেওয়াজ বৈদ্যের বাড়িতে মানুষের ভিড়। বাইরে ৪-৫ জন দালাল রোগীদের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে দরকষাকষি করছেন। রোগীরা সবাই বৈদ্যের সামনে দাঁড়ানোর জন্য ব্যাস্ত।
এদিকে বৈদ্য লুঙ্গী ও হাফ হাতা গেন্জী পরে একের পর এক সিগারেট টানছেন, সিগারেট টানা শেষে কোরআন ও হাদীসের ভূলভাল আয়াত পড়ে শোনাচ্ছেন। পাশে বসে আছে বেশ কয়েকজন অনুসারী।
এরপর দেখা গেলো সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা, আর ‘ফু’ দিচ্ছেন কবিরাজ। তারপর বৈদ্যের সামনে টাকা রেখে পা ধরে সালাম করে চলে যাচ্ছেন রোগীরা।
পাশে আলম নামে তার আরেক অনুসারী ফেলে রাখা টাকা গুলো ভাঁজ করে বান্ডিল করছেন। এভাবেই চলছে চিকিৎসা।
চকরিয়া মানিকপুর থেকে তথাকথিত ‘চিকিৎসা’ নিতে আসা ববিতা বড়ুয়া নামক এক মহিলা বলেন, ‘দাম্পত্য কলহের সমস্যায় এ পর্যন্ত ৮ বার আসছি। ২৫ হাজার টাকা ও দিয়েছি, তবুও কোন কাজ হচ্ছেনা। স্বামী প্রবাসে থাকে এটা জেনে আরো ২৫ হাজার টাকা দাবি করছে। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।’
স্থানীয় কয়েকজন জানান, ‘তার এই প্রতারনা সিন্ডিকেটের ৪/৫ জন সক্রিয় দালাল রয়েছে। এদের প্রধান হচ্ছে আলম নামক এক ব্যক্তি, যিনি সহজ সরল মানুষদের সহজেই বশ করতে পারেন।’
রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে সপ্তাহের দুইদিন বসান প্রতারনার আরেক ফাঁদ, জ্বীন হাজিরার হাট। যেটিতে ব্যক্তি ভেদে ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন বলে জানা গেছে। এভাবেই সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্হানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির আশ্রয়ে তিনি প্রতিনিয়ত এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন।’
এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে বৈদ্যের কাছে দাম্পত্য কলহের কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে বর্ণনা করে চিকিৎসা বাবদ খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ২০ হাজার টাকা দাবি করে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইল শাহনেওয়াজ বৈদ্য বলেন, ‘বাবার দয়ায় আমি কবিরাজ হয়েছি। জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছি। সবাই আমার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হচ্ছেন। প্রতিদিন রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।আগে আমার কিছু ছিলনা এখন আমার সবকিছু হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া থানার ওসি মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।’ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেয়া হবে বলে ও জানান তিনি।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, ‘চিকিৎসাশাস্ত্রে এ ধরণের কোন ব্যবস্থা নেই। এটি প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে এসব প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএম