এইমাত্র
  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আমার নামে মামলা হয়েছে: শিশির মনির
  • দুপুরে সংবাদ প্রকাশ, বিকেলে সিলগালা নকল ঔষুধের কারখানা
  • বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম, আগামীকাল থেকে কার্যকর
  • ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনীত টাঙ্গাইল শাড়ি
  • আনোয়ারায় অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতালে প্রশাসনের অভিযান, দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  • আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলা
  • জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের শোক প্রকাশ, দ্রুত বিচার আহ্বান
  • লোহাগড়ায় অবৈধ ৩৭ টি ইটভাটায় পরিবেশের বিপর্যয়
  • ৩ দলের সমন্বয়ে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ
  • ঝিনাইদহে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন
  • আজ রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    অনুসন্ধানের ৩য় ও শেষ পর্ব

    ওসি আব্দুল হান্নানের হাত থেকে রক্ষা পান না খোদ পুলিশও!

    শামীম হাসান সীমান্ত, আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশ: ২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
    শামীম হাসান সীমান্ত, আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশ: ২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

    ওসি আব্দুল হান্নানের হাত থেকে রক্ষা পান না খোদ পুলিশও!

    শামীম হাসান সীমান্ত, আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশ: ২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

    বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম আলোচিত থানা সাভারের আশুলিয়া। দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই এলাকাটি এখন আইনশৃঙ্খলার জায়গায় নয়, বরং সেখানকার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নানের অপকর্মের জন্য বেশি শিরোনামে। ঘুষখোরি, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রভাব খাটানো, এমনকি নিজের অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের প্রতি অন্যায় আচরণ ও বদলির অভিযোগ সেখানে সাধারণ। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষ, কেউই রেহাই পাচ্ছেন না ওসির এই দৌরাত্ম্য থেকে।

    সরকার পরিবর্তনের পর যেখানে পুলিশের ভূমিকা আরও মানবিক ও দায়িত্বশীল হওয়ার কথা, সেখানে আশুলিয়া থানার চিত্র যেন উল্টো এক নির্মম বাস্তবতা। সময়ের কণ্ঠস্বরের তিন পর্বের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তার দুঃসাহসিক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার নানা দিক। আজ প্রকাশিত এই তৃতীয় ও শেষ পর্বে উঠে এসেছে- ওসি হান্নানের রোষে পড়া পুলিশ সদস্যদের দুর্দশা, তার প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তোলা দালাল চক্র, অবৈধ ঘুষ বাণিজ্য, স্কুলের জায়গা দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয়, এমনকি আত্মীয়স্বজন দিয়ে অফিস পরিচালনার ভয়াবহ চিত্র।

    জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর আশুলিয়া থানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়। এক বছরে বিভিন্ন অভিযোগে একে একে চারজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্লোজড হন। মাত্র চার মাস আগে, গত ২৫ জুন ওসি আব্দুল হান্নান যোগদান করেন আশুলিয়া থানায়। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পেয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন তিনি।

    ঘুষ বাণিজ্যের কথায় রাজি না হওয়ায় বদলি:

    ওসি হান্নানের অপকর্মের খবর থানার ভেতরেই অজানা নয়। বরং তিনি তার অধীনস্থদেরকেই ঘুষ আদায়ের যন্ত্রে পরিণত করেছেন। কারো কাছ থেকে মাসোহারা তুলতে বলেন, কারো ওপর চাপিয়ে দেন মামলা বানানোর দায়িত্ব। কেউ যদি তার নির্দেশ অমান্য করেন, তাহলে তার পরিণতি হয় বদলি, বদনাম কিংবা ভয় দেখানো।

    অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি ওসি আব্দুল হান্নানের মাসিক ঘুষ বাণিজ্যের কথায় রাজি না হওয়ায় আশুলিয়া থানার কম্পিউটার অপারেটর মনিরকে তিনি বদলি করে দেন তাৎক্ষণিকভাবে। পরবর্তীতে ওসি আব্দুল হান্নান তার আগের কর্মস্থল থেকে মামুন নামের একজন কম্পিউটার অপারেটরকে নিয়ে আসেন।

    জানা যায়, অপারেটর মামুন পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য সবাইকে ফোন দেন এবং তাদের থেকে টাকা নিয়ে পরবর্তীতে সেই টাকা ওসিকে দেন। কার থেকে কত টাকা সংগ্রহ করা হয়, তা মামুন একটি খাতায় লিখে রাখেন। মাস শেষে ওসি আব্দুল হান্নানকে তার হিসাব দেন। এভাবেই চলছে ওসি হান্নানের ঘুষ বানিজ্য। অথচ বলা আছে, থানা থেকে কাউকে ফোন দিয়ে কোন প্রকার হয়রানি করা যাবে না। এই কাজে সাকিব ও মিলন নামের আরও দু'জন অপারেটর জড়িত রয়েছেন।

    আশুলিয়া থানার সাবেক কম্পিউটার অপারেটর মনির বলেন, ‘আমি কোন দোষ করিনি। তারপরও ওসি স্যার আমাকে বদলি করে দিলেন। ওসি স্যার আমাকে ডেকে প্রতি মাসে তাকে ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে বললে আমি সরাসরি স্যারকে না করে দেই। আমার পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব না। পরের দিন তিনি আমাকে আশুলিয়া থানা থেকে বদলি করে দেন।’

    তিনি আরও বলেন, ‘আমি এক বছরেরও কম সময় আশুলিয়া থানায় ছিলাম। আমার নামে কোন ক্লেইম নেই। তবুও আমাকে বদলি করে দিল। সবাই আমাকে নিয়ে আফসোস করে বলছে- তুমি ওসির রোষানলে পড়ে গেছ, তাই তোমাকে বদলি করলো।'

    হান্নানের দাপটে স্কুলের জায়গায় ভবন নির্মাণ:

    ওসি হান্নানের দাপট শুধু থানার ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়। তার প্রভাব এখন আশুলিয়ার জনজীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের জায়গা দখল করে সেখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জোরপূর্বক জায়গা দখল করে ভবনের কাজ শুরু হয়েছে, আর সেই অর্থের জোগাড় চলছে স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টংগাবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘থানা থেকে আমাকে প্রায় সময় ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন আর বলেন ওসি স্যারের নির্দেশ ভবনের কাজে অনেক টাকা লাগবে। আপনি কিছু টাকা দেন। তা না হলে বিপদে পড়ে যাবেন।’

    তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেশের বাহিরে থাকি। আমার নামে মিথ্যা ছাত্র হত্যা মামলা হয়েছে। আমি সেই সময় দেশের বাহিরে ছিলাম। অথচ পুলিশ আমাকে সেই মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করছেন। তার কথা না শুনলে আমার নামে মনগড়া রিপোর্ট প্রদান করবেন।’

    এই বিষয়ে আশুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজের কেরানী নুরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, 'আমরা পুলিশকে জায়গা দিয়েছিলাম থাকার জন্য, কিন্তু এখন তারা সেখানে স্থায়ী ভবন তুলছে। এটি স্কুলের সম্পত্তি।'

    আশুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি ডাক্তার দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু বলেন, ‘ঘর তোলার জন্য কোনো অনুমতি কাউকে দেইনি। এই বিষয়ে আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ বসে সিদ্ধান্ত নেব।’

    ফুটপাত থেকে শুরু করে জুয়ার আসর:

    আশুলিয়ার ফুটপাত, পলিথিন দোকান, ভাঙ্গারি ব্যবসা, এমনকি স্থানীয় জুয়ার আসরও বাদ যায়নি ওসি হান্নানের ঘুষ বাণিজ্য থেকে। থানার ক্যাশিয়ার শাহ আলমের মাধ্যমে প্রতি মাসে নিয়মিত টাকা ওঠে এসব জায়গা থেকে। ভাঙ্গারি দোকান থেকে ৭০ হাজার, পলিথিন ব্যবসা থেকে ৫০ হাজার, ফুটপাতের দোকান থেকে লাখ টাকা, সবই নিয়ম করে যায় ওসির কাছে। এছাড়া বগাবাড়ী এলাকার 'দুই তলা বোর্ড' নামে একটি জুয়ার আসরের মালিক আরজু প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেন ওসির বডিগার্ড হানিফের মাধ্যমে।

    এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা মাসে মাসে টাকা দিই, না দিলে দোকানে পুলিশ পাঠায়। মামলা দিয়ে হয়রানি করে। থানার মধ্যে এখন সবাই জানে, টাকা দিলে শান্তি, না দিলে বিপদ।

    আওয়ামী শক্তিতে মহিয়ান হান্নান:

    ওসি হান্নানের ক্ষমতার পেছনে বড় ভূমিকা তার রাজনৈতিক সংযোগ। তিনি দীর্ঘদিন রাজশাহী জেলায় চাকরি করেছেন। সেখানেই তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে সাবেক রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওসি আব্দুল হান্নান মিষ্টি কথা বলে। কিন্তু তার অন্তরে বিষ। দীর্ঘদিন রাজশাহী অঞ্চলে চাকরি করার ফলে রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের অতি ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত ওসি আব্দুল হান্নান। মেয়রের প্রভাব দেখিয়ে অনেক অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন তিনি। বর্তমানে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছত্রচ্ছায়ায় তিনি আগের সেই প্রভাবই টিকিয়ে রেখেছেন।’

    হান্নানে ‘নিরাপদ’ মাদককারবারিরা:

    মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ওসি আব্দুল হান্নানের। নিরিবিলি এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ছোট বিল্লালকে ধরতে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ সদস্য অভিযানে গেলে ওসি আব্দুল হান্নান সেই পুলিশ সদস্যদের ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে সেই সব পুলিশ সদস্যকে আশুলিয়া থেকে বদলি করে দেন।

    আশুলিয়া থানা পুলিশের সাবেক এক সদস্য বলেন, ‘ওসি স্যার আমাদের সঙ্গে অবিচার করেছেন। আমাদের কোন দোষ নাই। মাদক ব্যবসায়ী ছোট বিল্লাল এই এলাকায় মাদক সরবরাহ করেন। ওসিকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা দিয়ে থাকেন। আমাদের এই ঘটনায় ছোট বিল্লালের থেকে ওসি মোটা অংকের অর্থ নিয়েছেন। আর আমাদেরকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করে দিয়েছেন।’

    রক্ষা পান না খোদ পুলিশ সদস্যরাও:

    ওসি আব্দুল হান্নান উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে আশুলিয়া থেকে একের পর এক পুলিশ অফিসারকে বদলি করতে থাকেন। তাদের বদলির মূল কারণ- যেসব অফিসার ওসি হান্নানের মন মতো কাজ করবেন না, ওসির রোষানলে তারাই পড়েন। কপালে জুটে বদলি।

    এছাড়াও ওসির আগের কর্মস্থল থেকে আনতে থাকেন একের পর এক পুলিশ অফিসারদের। তাদের মধ্যে এসআই আনোয়ার ও এএসআই যুবায়ের আগে ওসি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে চাকরি করেছেন।

    আশুলিয়া থানার কম্পিউটার অপারেটর মনিরকে সরিয়ে মামুন নামের তার আগের থানার কম্পিউটার অপারেটরকে নিয়ে এসেছেন। এভাবেই চলছে ওসি আব্দুল হান্নানের স্বেচ্ছাচারীতা। তার অনুসারীদের দিয়ে তিনি সিভিল টিম পরিচালনা করছেন বলেও জানা গেছে।

    মামলায় ফাঁসানো যেন নৈমিত্তিক কাজ:

    জামগড়া থেকে সম্প্রতি একজনকে আশুলিয়া পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আটক লোকটির ভাই রিয়াজ পরবর্তী সময়ে থানায় গিয়ে জানতে চান- কী মামলায় তার ভাইকে ধরা হয়েছে। থানার মুন্সি দুলাল সেই লোককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় ফাঁসিয়ে দিবেন- এমন হুমকি দেন।

    রিয়াজ বলেন, ‘আমার ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে গেলে আমি মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার মুন্সি দুলাল ও ওসি আব্দুল হান্নান আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ওসি হান্নান আমাকে আওয়ামী লীগের লোক বানিয়ে মামলা দিতে বলেন মুন্সি দুলালকে। একজন ওসি নামাজে যাওয়ার আগে কতটা জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করতে পারেন, তা ওসি হান্নানকে না দেখলে বোঝা যাবে না। পরে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে সব কিছু ডিলিট করে দেন। আমি কোনমতে সেখান থেকে সরে যাই। আমি তারপর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

    রিয়াজ বলেন, ‘এই ঘটনার পরেই ওসি আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। তার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতকে।’

    অপরদিকে, ইউসুফ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আমিরকে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই দুজন পুলিশ অফিসারকে দিয়ে ডেকে নিয়ে আটক করার অভিযোগ উঠেছে ওসি আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে। ইউসুফ মার্কেট এলাকায় একটি মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলায় আসামি করা হয় আমির নামের একজনকে। সেই মামলায় ওসি কোন তদন্ত ছাড়াই তাকে হয়রানি করছে বলে জানান আমির।

    ভুক্তভোগী আমির বলেন, ‘আমি বাসায় ছিলাম। হঠাৎ আশুলিয়া থানার দুজন এসআই আমাকে ডেকে থানায় নিয়ে যান। তারা বলেন, আমার নামে মামলা আছে। এ ঘটনায় আমি পুরো অবাক। কোন তদন্ত ছাড়া কিভাবে মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামি করলেন!’

    জামগড়া এলাকায় মনির নামের একজন তার নিজস্ব গাড়ি ভাড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ পেয়ে ওসি আব্দুল হান্নান গাড়ির মালিক ও তার স্ত্রীকে থানায় তার রুমে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ছাত্র হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। স্ত্রীর সামনে স্বামীকে প্রতিবন্ধী বলে বকাবকি করেন। তারা থানা থেকে বের হয়ে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে তার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন তাদের এবং আশুলিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে কোর্ট থেকে সিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

    ভুক্তভোগী মনির বলেন, ‘আমার গাড়ি, অথচ আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ পেয়ে ওসি আব্দুল হান্নান আমাকে ডেকে নিয়ে মামলাসহ নানা রকমের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা কতটা জঘন্য হলে তার আচরণ এত খারাপ হতে পারে! আমার বউ আর আমাকে ওসি বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামি করার ভয় দেখান। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

    ভূমিদস্যুর সঙ্গে মিত্রতা:

    নিজের জায়গা স্বত্ত্বেও একের পর এক মিথ্যা মামলায় আসামি হচ্ছেন ধামসোনা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আসাদুল্লাহ আহম্মেদ দুলাল। ভূমিদস্যু মতিন একটার পর একটা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করলেও আশুলিয়া থানার পক্ষ থেকে কোন তদন্ত ছাড়াই মামলাগুলো নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

    ডাক্তার আসাদুল্লাহ আহম্মেদ দুলাল বলেন, ‘ফ্যাসিষ্টের নিয়মে থানা চলছে। আমার জায়গা, অথচ একের পর এক মামলা দিচ্ছে আমার নামে। আশুলিয়া থানা পুলিশ যেন ভূমিদস্যু মতিনের পক্ষ নিয়ে আমাকে হয়রানির শুরু করছেন।’

    জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে ৫ আগষ্টের পরে এসেও আশুলিয়া থানার ওসির এমন কর্মকাণ্ডে। ৫ আগস্টের আগে তার আওয়ামী সখ্যতা এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী এমন রূপে আতঙ্কিত পুরো আশুলিয়ার জনপদ।

    ঘুষের টাকা সরাতে থানায় রাখেন বোনজামাইকে:

    ওসি হান্নানের পরিবার রাজশাহীতে থাকেন। থানার কোয়ার্টারে তিনি একা থাকতে ভয় পান, এ কারণ দেখিয়ে নিজের বোনজামাইকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে থানায় রাখছেন তিনি। তবে বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত সহচর রাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। থানার নানা কাজে ওই আত্মীয়কে সরাসরি জড়িত দেখা যায়।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, ওসি হান্নান তার আপন এই বোনজামাইকে অবৈধভাবে নেওয়া ঘুষের টাকা সরাতে ব্যবহার করেন। তার ব্যবহৃত পুলিশের গাড়িটি দুলাভাইও ব্যবহার করেন। তার দুলাভাই সারাদিন তার অফিস কক্ষে বসে থাকেন এবং ওসি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় তদন্তে যান।

    এসব অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে ওসি হান্নান সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, তাঁর কোনো বক্তব্য নেই। 'যা বলার, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই বলবেন,'-এমন মন্তব্য করেই তিনি থানার চেয়ারে থেকে উঠে কক্ষ ত্যাগ করেন।

    সার্বিক বিষয়ে জানতে রবিবার (০২ নভেম্বর) রাতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

    এ সম্পর্কিত আগের সংবাদ-

    ঘুষ, মামলা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি- কী নেই আশুলিয়া থানার ওসির সম্ভারে!

    আশুলিয়ায় ওসি হান্নানের দাপট: ঘুষ, হয়রানি আর মাসোহারা বাণিজ্যে তোলপাড়

    এসকে/আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…