ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলে চলতি সপ্তাহে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও বন্যায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গত শনিবার (১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আরো পাঁচজন এখনো নিখোঁজ।
চলতি সপ্তাহের শেষে ভিয়েতনামের উপকূলীয় প্রদেশগুলোতে ভারী বৃষ্টি নেমেছে, যেখানে এক দিনে সর্বোচ্চ ১.৭ মিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির হুয়ে, দা নাং, লাম ডং ও কোয়াং ত্রি প্রদেশে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হোই আনের প্রাচীন শহরও বন্যায় তলিয়ে গেছে। স্থানীয় একটি নদীর পানি ৬০ বছরের সর্বোচ্চ স্তরে ওঠায়, শহরের বাসিন্দারা কাঠের নৌকায় চলাচল করতে বাধ্য হয়েছেন। হোই আনের বাসিন্দা চুয়াং নুয়েন বলেন, ‘সবাই এখন আতঙ্কিত। মানুষ বন্যার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল, কেউ ভাবতে পারেনি পানি এত দ্রুত উঠে যাবে।
অনেকের বাড়ি প্রস্তুতও হয়নি, ফলে অনেক সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
ভিয়েতনাম দুর্যোগ ও জলাশয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ভিডিডিএমএ) জানিয়েছে, বর্তমানে ১৬,৫০০-এরও বেশি ঘর বন্যায় তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ৪০,০০০-এরও বেশি পোলট্রি ও গবাদি পশু বন্যায় হারিয়েছে এবং ৫,৩০০ হেক্টরেরও বেশি (প্রায় ১৩,০০০ একর) কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। ভিয়েতনামের পরিবেশ মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, এই সপ্তাহের শুরুর দিকে দেশজুড়ে ১০০,০০০-এরও বেশি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং ১৫০-এর বেশি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া যেমন— ঝড় ও বন্যাকে আরো প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক করছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে মানুষ।
ভিয়েতনাম পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ঘূর্ণিঝড় অঞ্চল, যেখানে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি হয়। প্রতিবছর দেশটি সাধারণত ১০টি ঘূর্ণিঝড় বা ঝড়ের প্রভাবের মুখোমুখি হয়, তবে ২০২৫ সালে ইতিমধ্যে ১২টি ঝড় আঘাত হেনেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষত ঝড়, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ভিয়েতনামে ১৮৭ জন মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোট অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৬১০ মিলিয়ন ডলার।
সূত্র : এএফপি
এবি