কান্নার একচ্ছত্র অধিকার শুধু দুঃখেরই তা কিন্তু নয়। আনন্দে আবেগআপ্লুত হয়েও অনেকে কাঁদেন। দুঃখ বা আঘাতে ব্যথা পেলে কান্না করাটা স্বাভাবিকভাবে নেয় সবাই। তবে বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের কান্নার প্রবণতা বেশি। কান্না একটি এমন একটি স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর মানসিক প্রক্রিয়া যা শরীরকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ‘‘যারা বেশি কাঁদেন তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এর কারণ কখনও মানসিক কখনও শারীরিক আবার কখনও পারিপার্শ্বিক বিষয়।’’ বেশি কান্না করা মানুষের আচরণে বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
প্রতিটি মানুষই জীবনে কখনো না কখনো কাঁদবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কান্নারও যে কিছু শারীরিক উপকারিতা রয়েছে তা নিশ্চই জানা ছিল না। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন কাঁদলে কী ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
উচ্চ মানসিক সংবেদনশীলতা যাদের বেশি: এই ব্যক্তিরা সাধারণত অন্যের আবেগ ও অনুভূতি খুব সহজেই বুঝতে পারেন এবং গভীরভাবে অনুভব করেন। সামান্য ঘটনায় তারা বেশি প্রভাবিত হন।
সহানুভূতির প্রবণতা যাদের বেশি: যাদের মধ্যে সহানুভূতির মাত্রা বেশি, তারা প্রায়শই বেশি কাঁদেন। তারা নিজেদের পাশাপাশি অন্যের কষ্টেও সহজে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
মানসিক চাপ বা বিষণ্নতায় ভোগা মানুষ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্নতার কারণে মানুষ বেশি কাঁদতে পারে। কান্না এক্ষেত্রে জমে থাকা মানসিক চাপ কমানোর একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
হরমোনের তারতম্য যাদের বেশি: হরমোনের তারতম্য, বিশেষ করে নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে, কান্নার প্রবণতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনের মাত্রা কান্নার সাথে সম্পর্কিত।
দুঃখজনক অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে যাদের: অতীতের কোনো দুঃখজনক বা আঘাতমূলক ঘটনা মানুষের মধ্যে সহজে কেঁদে ফেলার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
এ ছাড়া, কিছু মানুষের জন্য কান্না হল নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার একটি উপায়, কারণ তারা হয়তো কথা বলে তা প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
ব্যথা উপশম করে: কান্নাকাটি করার ফলে শরীরে এন্ডোরফিন উৎপন্ন হয়, যা কিছু কিছু ব্যথাও উপশম করে। কান্নাকাটি আপনার প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকেও সক্রিয় করে, যা শিথিলতা বাড়ায়, স্ট্রেস বা চাপ কমায় এবং ব্যথা উপশম করে।
চাপ প্রশমিত করে: কান্না কর্টিসলের মতো স্ট্রেস-সম্পর্কিত রাসায়নিকগুলো বের করে দেয়, যা আপনার শরীরকে ধুয়েমুছে ডিটক্সিফাই করে। ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়।
প্রশান্তির ঘুম: অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটির ফলে শরীরে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের পাশাপাশি প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়। মাঝেমধ্যে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে মাথা ঠান্ডা হয়ে একধরনের প্রশান্তি বোধ করবেন, এটা আপনাকে শান্তিপূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম দিতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে মাঝেমধ্যে একটু কান্নাকাটি করতেই পারেন!
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে: চোখের পানিতে লাইসোজাইম নামক একধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এনজাইম রয়েছে। লাইসোজাইম ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করে আপনার চোখকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
মুড ভালো করে: মনোবিদেরা বলেন, কান্না আবেগ দমন করে আপনার মুড ভালো করে দিতে পারে। কান্নার মাধ্যমে আপনি প্রকারান্তরে ক্ষতিকর হরমোনগুলো শরীর থেকে বের করে দিয়ে ফুরফুরে হয়ে ওঠেন।
মস্তিষ্কে অক্সিজেন ক্ষমতা বৃদ্ধি: কান্নাকাটি করার সময় আমরা দ্রুত নিশ্বাস নিই, এতে মস্তিষ্ক ‘ঠান্ডা’ হয়ে অক্সিজেন নেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
চোখ সুস্থ রাখে, উন্নত করে দৃষ্টিশক্তি: কান্নাকাটি চোখকে স্বাভাবিকভাবে পিচ্ছিল করে, শুষ্কতা প্রতিরোধ করে, কর্নিয়া থাকে আর্দ্র ও পরিষ্কার। ফলে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি কমে। চোখের জল ধুলাবালু ও অন্য বিরক্তিকর পদার্থগুলো ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে। এ ছাড়া নেত্রনালি সতেজ করে চোখকে আরাম দেয় কান্না।
মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে: অনেক সময় বন্ধু বিয়োগ হলে বা ব্রেকআপ হলে আমরা কান্নায় ভেঙে পড়ি। এ ধরনের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে কান্না। তখন মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ও চাপ কাজ করে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে কান্না।
বাচ্চাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ও ঘুমাতে সাহায্য করে: শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে কি কারো ভালো লাগে? কিন্তু কান্নাকাটি শিশুদের জন্যও উপকারী। এটি শিশুদের শ্বাসনালি পরিষ্কার করে। বেশি বেশি অক্সিজেন নিতে সহায়তা করে। এতে তার কষ্ট লাঘব হয়। ‘ছন্দোবদ্ধ’ কান্না শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঠিক বড়দের মতোই কান্নাকাটির পর শিশুদের চাপ ও দুশ্চিন্তা কমে যায়, ফলে সে রিল্যাক্সড হয়। ঘুম ভালো হয়।
উল্লেখ্য, যদি অতিরিক্ত কান্না দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে বা বিষণ্নতার লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এইচএ