ভোলার চরফ্যাশনে এক দিনমজুর পরিবারের চলাচলের পথে কাঁটার বেড়া দিয়ে তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সালিশদের নির্দেশে এই কাঁটার বেড়া দিয়েছেন বলে একই বাড়ীর ইয়াছিন তালুকদার নিজেই স্বীকার করেছেন। দীর্ঘ তিন মাস এ বিষয়টি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও নিরুপায় জীবন যাপন করছেন অবরুদ্ধ দিনমজুর কবির তালুকদারের ছয় সদস্যের পরিবার।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে। এই ঘটনায় দিনমজুর কবিরের বাবা আবদুল মালেক তালুকদার চরফ্যাশন থানায় প্রায় এক মাস আগে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহ পাননি। ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি।
সোমবার (০৩ নভেম্বর) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুর কবিরের বসত ঘরের সামনে চলাচলের পথে বৃহদাকার খাদ রয়েছে। ওই খাদের দুই পাশের কাঁটার বেড়ায় আবদ্ধ রয়েছে পরিবারটি। ঘর থেকে বের হওয়ার মতো কোন যায়গা নেই তাদের। অন্যের বাড়ীর বাগানের মধ্যে দিয়ে দিনমজুর কবিরের কলেজ ও স্কুলে পড়ুয়া সন্তানরা তাদের স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কবির তালুকদার ও ইয়াছিন তালুকদার সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। কবির তালুকদার ঢাকাতে দিনমজুর কাজ করেন। গ্রামের বাড়ী আব্দুল্লাহপুর ২নং ওয়ার্ডে তার তিন সন্তান, স্ত্রী ও মা-বাবা বসবাস করছেন। কবিরের চাচাতো ভাইর ছেলে ইয়াছিন তালুকদারের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। জমি বিরোধ নিরসনে স্থানীয় কামালের নেতৃত্বে, ইমরান, রিয়াজ, রুবেল, আনোয়ার, ফারুক ও আমজাদসহ উভয় পক্ষ সালিশীতে বসে। সালিশদের নির্দেশে ইয়াছিন তালুকদার ভুক্তভোগীদের চলাচলের যায়গায় খাদ করে দু’পাশে কাটার বেড়া দেয়।
দিনমজুর কবিরের স্ত্রী হোসনেয়ারা জানান, তার স্বামী কর্মের জন্য ঢাকাতে থাকেন। সে এক ছেলে, দুই মেয়ে ও শশুর-শাশুড়ী নিয়ে বাড়ীতে থাকেন। তার চাচাতো দেবরের ছেলে ইয়াছিন জমি পাবে, এমন দাবী করে সালিশদের নির্দেশে আমাদের বসত ঘরের সামনে চলাচলের পথে কাঁটার বেড়া দেয়। তার বড় ছেলে আহাদ ডিগ্রী, মেয়ে মাহিয়া এইসএসসি ও হাফসা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। ছেলে-মেয়েরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হলে অন্য মানুষদের বাড়ীর বাগানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের পরিবারকে ‘একঘরে’ করে রেখেছে। এতে আমরা ভোগান্তিতে রয়েছি। আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখার কারনে মেয়েকে বিয়েও দিতে পারছিনা।’
চলাচলের পথে কাঁটার বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে ইয়াছিন তালুকদার বলেন, ‘আমার সাথে কবিরের তালুকদারের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। স্থানীয় সালিশদের নির্দেশে এই কাঁটার বেড়া দিয়েছি। সে আমার জমি বুঝিয়ে দিলে আমি কাঁটার বেড়া তুলে নিব।’
সালিশী বৈঠকের নেতৃত্ব দেয়া কামাল জানান, উভয়ের মধ্যে জমির অংশ নিয়ে বিরোধ মীমাৎসার জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি। শেষবারের সালিশী বৈঠকে ইয়াছিনকে বলেছি, ‘তুমি তোমার যায়গা দখল করে নেও।’
চরফ্যাশন থানার ওসি মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সত্যতা জানতে সেই সময়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম।
দিনমজুর পরিবারকে অবরুদ্ধ রাখার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি কে মুঠোফোন জানালে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাটি আপনার কাছ থেকে জেনেছি। তবে দিনমজুর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এসআর