এইমাত্র
  • প্রজন্ম লীগ নেতার নেতৃত্বে সাবেক সেনা সদস্যের ওপর হামলার অভিযোগ
  • বিএনপির প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
  • উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহার, শাহবাগে যান চলাচল স্বাভাবিক
  • বাংলা একাডেমির মাঠে বিজয় বইমেলা শুরু হচ্ছে বুধবার
  • এগিয়ে থেকে ড্র করলো লিভারপুল, সহজ জয় ম্যান সিটির
  • সালমান শাহ হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ১৩ জানুয়ারি
  • লক্ষীপুরে কবরস্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধার
  • বিটিআরসি ঘেরাও করে মোবাইল ব্যবসায়ীদের আন্দোলন
  • শাহবাগ অবরোধে ৫ কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা
  • আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই শহীদদের মরদেহ তোলা হবে: সিআইডি প্রধান
  • আজ রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    চট্টগ্রামে যুবশক্তির বৈঠকে সংঘর্ষ, আহত ৪

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ এএম

    চট্টগ্রামে যুবশক্তির বৈঠকে সংঘর্ষ, আহত ৪

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ এএম

    ‘দলীয় অভ্যন্তরীন বিভাজনে‘ চট্টগ্রাম নগরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)'র যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি'র এক সাংগঠনিক বৈঠক রক্তাক্ত সংঘর্ষে পরিণত হয়। সোমবার (৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের ওয়াসা মোড় এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় তলায় চলমান বৈঠকে আকস্মিক হামলায় অন্তত ৪ যুবনেতা গুরুতর আহত হন। হামলার পরপরই এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

    আহতরা হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর যুবশক্তির আহ্বায়ক ইরফাত ইব্রাহিম, সদস্যসচিব আবু নাঈম, সংগঠক আইয়াজ উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় সংগঠক আশরাফুল হক। আহত সবাইকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

    হামলার বিষয়ে যুবশক্তির নেতারা অভিযোগ করেছেন, এই হামলার পেছনে রয়েছেন- এনসিপি কেন্দ্রীয় নেত্রী সাগুফতা বুশরা মিশমার অনুসারীরা। তাদের অভিযোগ, সাংগঠনিক বৈঠকে নেতৃত্ব ও কর্মপন্থা নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে মিশমা অনুসারীরা বাইরে থেকে বহিরাগতদের ডেকে এনে তাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালায়।

    সাক্ষীদের বরাতে জানা যায়, সোমবার রাতে কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে চলছিল যুবশক্তির সংগঠনিক আলোচনা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নগর ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মী। বৈঠকের শুরু থেকেই বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়ে মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায়। একপর্যায়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে কয়েকজন বহিরাগত যুবক নির্বিচারে হামলা চালায়।

    হামলায় আহত আহ্বায়ক ইরফাত ইব্রাহিম সময়ের কন্ঠস্বর-কে বলেন, “আমরা সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ ৮-১০ জন অপরিচিত যুবক ঘরে ঢুকে আমাদের উপর হামলা চালায়। তারা নিজেদের মিশমা আপার লোক বলে পরিচয় দেয়। আমাদের মারধর করে, চেয়ার ছুঁড়ে মারে। কয়েকজনকে মাথায় আঘাত করে ফেলে দেয়।”

    মহানগর সদস্যসচিব আবু নাঈম বলেন, “মিটিংয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল, কিন্তু তা সীমিত পর্যায়ে ছিল। হঠাৎই পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা হয়। এটা কোনো তাৎক্ষণিক ঝগড়া নয়, বরং নেতৃত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্রের অংশ। মিশমা পক্ষ তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়।”

    অন্যদিকে সংগঠক আইয়াজ উদ্দিনের অভিযোগ, “এই হামলা শুধু দলীয় বিষয় নয়, এখানে বহিরাগত রাজনৈতিক শক্তিও ব্যবহার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ ও কিছু গোপন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মিশিয়ে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়।”

    অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপি কেন্দ্রীয় নেত্রী সাগুফতা বুশরা মিশমা এ হামলার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনার সময় আমি নিজে অন্য একটি সভায় উপস্থিত ছিলাম। কে বা কারা কোথায় কী করেছে, সেটি আমার জানা নেই। এটি আমার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার। কিছু ব্যক্তি দলের ঐক্য বিনষ্ট করার অপচেষ্টা করছে।”

    হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের না হলেও আহত নেতারা জানিয়েছেন, তারা খুলশী থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

    খুলশী থানার ডিউটি অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থল সম্পর্কেও তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।”

    রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও এনসিপির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সম্প্রতি যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, চট্টগ্রামের এই ঘটনা তারই প্রতিফলন। একপক্ষ সাগুফতা বুশরা মিশমার নেতৃত্বে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চায়, অপরপক্ষ নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। এই মতবিরোধই সোমবারের রক্তাক্ত ঘটনার জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

    এনসিপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের কন্ঠস্বর-কে বলেন, “এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। একটি নতুন রাজনৈতিক দলের ভেতরে এমন সহিংসতা সাংগঠনিকভাবে দলের জন্য ভয়াবহ সংকেত। দলীয় ঐক্য রক্ষা করতে না পারলে জাতীয় পর্যায়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।”

    এনসিপির এই অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরাও ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।

    চট্টগ্রাম মহানগর এনসিপির একাধিক নেতা মনে করছেন, এখন সময় এসেছে দলীয় শৃঙ্খলা ও সংহতি পুনর্গঠনের। তারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এমন সংঘর্ষ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে।

    চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে সামনে এনে রাজনৈতিক বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইলেও, এনসিপির অভ্যন্তরীণ এই বিভাজন তাদের সংগঠনিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিতে পারে।

    ইখা

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…