কুমিল্লার হোমনা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির একাংশের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ভিটিকালমিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোসলেহ উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, মো.মনিরুজ্জামান, মো. নজরুল ইসলাম, হাসান উদ্দিন মোল্লা, মো. ইমান উদ্দিন, মো.ইকবাল হোসেন ও জামির হোসেন, মো. মহসীন, মো. শাহীড়ন নামের কয়েকজন সহকারি শিক্ষক জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নামে একটি ভুয়া পকেট কমিটি গঠন করে হোমনা থানা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অফিস দখল করেন।
পরবর্তীতে সমিতির একাউন্ট থেকে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার এবং মার্কেটের ১৪ মাসের ভাড়া বাবদ আরও প্রায় ১৪ লাখ টাকা সাধারণ শিক্ষকদের রেজুলেশন ছাড়া বেআইনি ভাবে উত্তোলন করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। জানা গেছে, ১৯৬২ সালে হোমনা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট থেকে মাসিক চাঁদা নিয়ে উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে ২৪ শতাংশ জায়গা ক্রয় করে।
পরবর্তীতে এখানে মার্কেট নির্মান করে দোকান ভাড়া দেয়া হয়। বর্তমানে এ মার্কেট থেকে প্রতিমাসে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া য়ায়। কিন্ত উক্ত মার্কেটের দোকান বরাদ্ধে শিক্ষক পরিবারের অগ্রাথিকার থাকার কথা থাকলেও কোন শিক্ষক বা শিক্ষক পরিবারকে দোকান ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষকদের না জানিয়ে কতিপয় সহকারি শিক্ষক শিক্ষকদের কল্যাণে গঠিত শিক্ষক সমিতি অবৈধ ভাবে দখল করে ব্যক্তিগত স্বার্থে খরচ করছে তা দুঃখজনক। অথচ এ কমিটি সাধারণ শিক্ষক দ্বারা নির্বাচিত বা অনুমোদিত নয়। এমন কি কমিটি গঠনের কোন বৈধতা নেই। এমন কি সমিতিতে এমন শিক্ষকের নাম সদস্য দেখিয়েছে তারা অনেকই জানেন না। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ তদন্ত করে তবে সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এ দিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জানান, আমি এই সমিতিতে নাই কিন্ত আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আমি কোন আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত নই।
অন্যদিকে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম ভূইয়া জানান, সমিতির একাউন্টে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জমা রেখে আসছি। পরে তারা সমিতির দায়িত্বে নেন। এর সাথে ১৪ মাসের ভাড়ার টাকা জমা হওয়ার কথা।
এ ছাড়া উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষক সমিতির মার্কেট ৯২ টি প্রাথমিক শিক্ষকদের সম্পদ। এর স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রতি শিক্ষকদের আস্থা নষ্ট হবে পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে সভাপতি মনিরুজ্জামান জানান, আমরা কোনো অনিয়ম করছি না। নিয়ম মেনেই খরচ করছি আমাদের বিল ভাউচার আছে। বরং যিনি অভিযোগ করেছেন তাদের সময়ে কোন হিসাব ছিল না।
হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ৪ নভেম্বর শুনানির জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে। শুনানি শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এসআর