সাভারের আশুলিয়ায় ‘অনিয়ম-দুর্নীতির বরপুত্র’ ওসি হান্নানের বিরুদ্ধে এসেছে আরও একটি অভিযোগ। এবার দুর্নীতির তথ্য চাওয়ায় মামলার গ্যাড়াকলে পড়তে হয়েছে দুই সাংবাদিককে। কুট-কৌশলে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো শ্লীলতাহানি ও চুরির মামলা করিয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের এক নেত্রীকে দিয়ে। কোনো রকম প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মামলাটি নথিভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
গত শনিবার (০২ নভেম্বর ) রাতে আশুলিয়া থানায় আওয়ামী লীগ নেত্রী নাছরীন আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক হলেন- অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলাদেশ বুলেটিন-এর নিজস্ব প্রতিবেদক ও আশুলিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম হাওলাদার সাকিব এবং সকালের সময় পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি সুফি সুমন।
জানা গেছে, মামলার বাদি অ্যাডভোকেট নাছরীন আক্তার, যিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং অ্যাডভোকেট হিসেবে পরিচয় দেন। সম্প্রতি আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের নেত্রী নাছরিন আক্তারের বিপক্ষে পাওয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করছিলেন সাকিব আসলাম ও সুফি সুমন। এর সতত্যা পাওয়ার পর বক্তব্য জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেত্রী নাছরীন আক্তারকে দিয়ে কৌশলে ‘শ্লীলতাহানি’ ও ‘চুরি’র অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
মামলার বাদী ঢাকা জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নাছরিন আক্তারের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. এনামুর রহমান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীবের সঙ্গে সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি, তাকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিলে লোকবল ও অর্থ সংগ্রহ করতেও দেখা গেছে বলে গেছে।
এদিকে, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান কীভাবে কোনো রকম প্রাথমিক সত্যতা যাচাই না করেই দ্রুত মামলাটি নথিভুক্ত করলেন, তা নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মহল এবং সচেতন নাগরিক সমাজে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাংবাদিক সুফি সুমন অভিযোগ করে সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, তারা নাছরীন আক্তারের বিরুদ্ধে ওঠা ভূমি জালিয়াতি ও দখলদারিত্বের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে 'চুরির' মতো মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছেন। 'এটি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে রুদ্ধ করার একটি অপচেষ্টা’-বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক আসলাম হাওলাদার সাকিব বলেন, ‘ওনার (নাছরীন) চেম্বারে যাওয়া তো দূরের কথা, এই মামলার বাদীর সঙ্গে আমার কোনোদিন সামনাসামনি দেখাও হয়নি। তাছাড়া, মামলার এজাহারে ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে- গত মাসের ১১ তারিখ। সময় উল্লেখ করা হয়েছে সকাল ৯টা। আমি ক্যালেন্ডার চেক দিয়ে দেখেছি, সেদিন ছিল শনিবার, সরকারি বন্ধ। বন্ধের দিন এসিল্যান্ড অফিসের পাশে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আর সকাল নয়টায় তো আমি বাসায় ঘুমে ছিলাম। আমার মোবাইলের লোকেশন বের করলেও সেটা দেখা যাবে।’
তাহলে মামলা দেওয়া হল কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেত্রী নাছরিন ঢাকা জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি করেছেন। তাছাড়া, উনি গোপনে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি এই বিষয় নিয়ে নিউজ করায় আমার বিরুদ্ধে উনি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। তাছাড়া বর্তমান ওসির বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে আমি ওসির বক্তব্য চেয়েছি। তাই ওসি সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই কৌশলে আমার বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করেছেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী অ্যাডভোকেট নাছরীন আক্তার বলেন, ‘আশুলিয়া থানায় আমি বেশ কয়েকটি মামলা করেছি। সম্প্রতি যে মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে যেখান থেকে তথ্য পেয়েছেন, সেখান থেকে তথ্য নেন।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে কথা হয় ইন্সপেক্টর ( তদন্ত) মো. আজগর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাইনা। অফিসিয়ালভাবে কোন অনুমতি নেই।'
জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজে তদন্ত করেছি। তথ্য কিছুটা সত্য মনে হয়েছে, তাই মামলা নথিভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। নারী হিসেবে তদন্তটা সেভাবে করা হয়েছে। আসামিরা সাংবাদিক কী-না জানি না।’
এসকে/ইখা/আরআই