শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা। ফলে জরুরি রোগী পরিবহনে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্র, অসহায় ও দুর্গম এলাকার রোগীরা পড়ছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে।
গত পাঁচ মাস ধরে চালক না থাকায় হাসপাতাল চত্বরে অকেজো পড়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি এখন প্রায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম। কোনো রোগীকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য কোথাও পাঠানোর প্রয়োজন হলেও গাড়িটি ব্যবহারের সুযোগ নেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, পাঁচ মাস আগে পূর্বের চালক অবসর গ্রহণের পর থেকে নতুন কোনো চালক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের অনুমোদন না থাকায় শূন্য পদে কাউকে নিয়োগ দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে পড়ে থেকে একরকম অচল হয়ে আছে।
এ অবস্থায় জরুরি রোগী পরিবহনে স্থানীয়দের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বা ভাড়া গাড়ির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যেখানে খরচ পড়ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজান সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকার পরও সেটি ব্যবহার করতে না পারাটা ভীষণ কষ্টের। বিশেষ করে রাতে বা হঠাৎ জরুরি পরিস্থিতিতে গাড়ি না পেয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই। তখন রোগী নিয়ে মহাবিপদে পড়তে হয়।’
সম্প্রতি উপজেলার চর পায়াতলী এলাকায় ভয়াবহ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পাঁচজন গুরুতর আহত হন। পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় রেফার করা হলে জানা যায় হাসপাতালে কোনো চালক নেই। বাধ্য হয়ে আহতদের স্বজনেরা জেলা সদর থেকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন।
তবে ততক্ষণে সময় অনেক দেরি হয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান আহত রোমান মাল (২২)।
নিহতের বাবা মিন্টু মাল চোখের পানি মুছে বলেন, ‘আমার ছেলেসহ পাঁচজন আহত হয়েছিল। ডাক্তাররা বললেন দ্রুত ঢাকায় নিতে হবে। কিন্তু চালক না থাকায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানো গেল না। পরে ৯ হাজার টাকা দিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। সদর থেকে গাড়ি আসতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এতেই আমার ছেলে মারা যায়। যদি চালক থাকতো, হয়তো ছেলেটা আজ বেঁচে থাকতো।’
স্থানীয় কামরুল হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হাসপাতালের গেটে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু চালক নেই! চোখের সামনেই গাড়ি, কিন্তু কাজে লাগাতে পারি না—এটা খুবই দুঃখজনক। গতরাতে মা অসুস্থ হলে রিকশায় করে হাসপাতালে আনতে হয়েছে। এমন কষ্ট যেন আর কাউকে না ভোগ করতে হয়।’
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে প্রায় পাঁচ মাস ধরে কোনো অ্যাম্বুলেন্স চালক নেই। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার জানানো হয়েছে। আমরা দ্রুত সমাধানের আশা করছি।’
শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. রেহান উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি। বর্তমানে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া না থাকলেও আপাতত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন চালকের পোস্টিং দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
এসএম