মোগরাপাড়া বাজারে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে এক বিবর্ণ বাস্তবতা—মাটিতে লেগে থাকা অসংখ্য পলিথিনের স্তর, আর বাতাসে উড়ে বেড়ানো আরও কিছু। দোকানিরা স্বাভাবিক নিয়মে পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে পলিথিন ধরিয়ে দিচ্ছেন, আর ক্রেতারাও তা গ্রহণ করছেন কোনো দ্বিধা ছাড়াই।
কাগজে-কলমে বহু বছর ধরে পলিথিন নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তবে সোনারগাঁয়ের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি এখন বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে। গ্রামের ছোট টং দোকান থেকে শহরের বড় শপিংমল—কোথাও পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। রাস্তা, ড্রেন, খাল-বিল—সব জায়গায় জেঁকে বসেছে এই রঙিন বর্জ্য। স্থির পানি জমে মশার প্রজনন বাড়ছে, আর এর সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুসহ নানা রোগের ঝুঁকি।
সম্প্রতি কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফাইরুজ তাসনিমের নেতৃত্বে মোগরাপাড়া বাজারে অভিযান চালানো হয়। এতে জব্দ করা হয় নিষিদ্ধ ৫২৬ কেজি পলিথিন ব্যাগ, এবং বিসমিল্লাহ প্যাকেজিং ও মেসার্স আরাফ স্টোর—এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযান শেষ হলেই ব্যবসায়ীরা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যান। বছরের পর বছর প্রশাসনের চোখের সামনে এমন পরিস্থিতিই চলছে।
সোনারগাঁয়ের স্কুলছাত্রী মাইমুনা আক্তার মিম বলেন, “একসময় সোনারগাঁ ছিল নদীনির্ভর সবুজ জনপদ। আজ সেই নদী-নালা পলিথিনে ঢেকে যাচ্ছে। এখনই সচেতন না হলে একদিন হয়তো শুধু ইতিহাসেই জানা যাবে—সোনারগাঁ ছিল সবুজের জনপদ।”
বিসমিল্লাহ এন এম জুলফিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, শিক্ষা নবিশ আইনজীবী নাদিরা আক্তার নীরা বলেন, “দেশে সর্বত্রই সহজে প্লাস্টিক-পলিথিন পাওয়া যায়। নদী-নালা ও জলাশয়ের নিচেও এখন পলিথিন জমে আছে। এগুলো শুধু পরিবেশই নয়, মানবদেহেও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। তাই অবাধ পলিথিন ব্যবহারের লাগাম টানা এখন জরুরি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু জরিমানায় সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাপড় বা পাটের ব্যাগ সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করা, পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি—এই দুই পদক্ষেপই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সমাজের প্রতিটি স্তরে “পলিথিনমুক্ত জীবনধারা” গড়ে তোলাই হতে পারে স্থায়ী সমাধান।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পলিথিন উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
এনআই