জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি)র যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির শরীয়তপুর জেলা শাখার সদ্য ঘোষিত নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘিরে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও পদত্যাগের ধারা। কমিটি ঘোষণার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সদস্যসচিব আমিন মোহাম্মদ জিতুসহ পাঁচজন নেতা পদত্যাগ করেছেন।
রবিবার (৯ নভেম্বর) বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সংগঠনের একাধিক সূত্র। সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে জাতীয় যুব শক্তির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট শরীয়তপুর জেলা আহ্বায়ক কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। কমিটি ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রথমে ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যসচিব আমিন মোহাম্মদ জিতু।
এরপর একে একে যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল হোসেন সরল, যুগ্ম সদস্যসচিব সাবরিন ইসলাম, সংগঠক রবিউল হাসান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব (২) রেজাউল করিম আদিব পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাঁরা সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
নবগঠিত কমিটি অনুমোদন দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম ও সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম। এতে কাওসার মৃধাকে আহ্বায়ক এবং আমিন মোহাম্মদ জিতুকে সদস্যসচিব করা হয়।
তবে কমিটি প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই একাধিক নেতা পদত্যাগ করায় সংগঠনের ভেতরে অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রথম পদত্যাগী সদস্যসচিব আমিন মোহাম্মদ জিতু তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমি আমিন মোহাম্মদ জিতু, জাতীয় যুব শক্তি এনসিপির সদ্য ঘোষিত শরীয়তপুর জেলা কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি। তবে ব্যক্তিগত কিছু বিশেষ কারণে এই দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। সংগঠনের কার্যক্রমে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে, তাই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের স্বার্থে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য চারজন নেতা একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
যুগ্ম সদস্যসচিব (২) রেজাউল করিম আদিব লেখেন, ‘একজন কর্মী যখন নিজের ঘাম শ্রম ও বিশ্বাস দিয়ে সংগঠনকে বড় করে তোলে তখন সে শুধু পদ নয়, সম্মানও প্রত্যাশা করে। কিন্তু যখন সেই সম্মানকে পদমর্যাদার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়, তখন পদ আর মর্যাদা এক থাকে না। আমার অজান্তেই আমাকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাই পদত্যাগ করেছি।’
যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল হোসেন সরল লেখেন, ‘এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নড়িয়া কমিটিতে আমাকে আহ্বায়ক করার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এবারও প্রত্যাশিত পদ পাইনি। তাই ব্যক্তিগত ও সংগঠনিক কারণে পদত্যাগ করেছি।’
সংগঠক রবিউল হাসান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমরা মাঠে ছিলাম, রক্ত দিয়েছি। কিন্তু আমাকে যে পদে রাখা হয়েছে, তা আমার অবদানের তুলনায় অপ্রতুল। তাই সম্মান রক্ষার্থে নিজ সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করছি।’
অন্যদিকে যুগ্ম সদস্যসচিব সাবরিন ইসলাম জানান, ‘কমিটিতে আমাকে রাখা হয়েছে, বিষয়টি আমার অজানা ছিল। সম্ভবত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণেই নামটি এসেছে। তাই বিভ্রান্তি এড়াতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।’
এ বিষয়ে নবগঠিত কমিটির সদস্যসচিব আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, ‘আমি আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করছি। তবে ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। লিখিত পদত্যাগপত্র ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে।’
অন্যদিকে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক কাওসার মৃধা বলেন, ‘সদ্য কমিটি ঘোষণা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজনের পদত্যাগের খবর পেয়েছি, তবে এখনো অফিসিয়ালি কোনো পদত্যাগপত্র হাতে পাইনি।’
জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘শরীয়তপুর জেলা কমিটির পাঁচ সদস্যের পদত্যাগের বিষয়টি অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। আমরা এখনো কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
সংগঠন সূত্রে আরও জানা যায়, নবগঠিত কমিটির পদবণ্টন ও অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসএম