আসন্ন ২০২৬ বইমেলায় প্রকাশিত হতে চলেছে এক গভীর আস্তিকতার কাব্য। যেখানে মানবিক প্রেম নয়, বরং প্রেম থেকে পাওয়া যন্ত্রণাই কবিকে এক ভিন্নতর আধ্যাত্মিক যাত্রায় চালিত করে।
সাহিত্য সব সময় প্রেমকে প্রাপ্তির লীলানন্দ হিসেবে দেখায় না; কখনও কখনও তা দেখায় এক ভগ্নস্তূপের মানচিত্র হিসেবে, যেখানে দুঃখই পথ দেখায় মহৎ উপলব্ধির দিকে। কবি এমদাদ হোসেনের (এমদাদ হোসেন) কাব্যগ্রন্থ "বেদনার দুর্দিনে তুমি আমার প্রার্থনা হও" (বেদনার দুর্দিনে তুমি আমার প্রার্থনা হও) হলো তেমনই এক যাত্রাপথ যা শুরু হয়েছে হৃদয়ের গভীর ক্ষতচিহ্ন থেকে, আর শেষ হয়েছে বিশ্বাস ও প্রার্থনার এক অনির্বচনীয় আশ্রয়ে।
এই কাব্যগ্রন্থে প্রেম হলো পরম শিক্ষকের ভূমিকায়, যার প্রথম পাঠ হলো হারিয়ে যাওয়া, এবং শেষ পাঠ হলো মুক্তি।
১. দহন ও শুদ্ধিকরণের মেটাফোর
এই কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো যন্ত্রণা ও অনুশোচনাকে শুদ্ধিকরণের প্রক্রিয়ায় পরিণত করা। কবি যখন বলেন, "হৃদয় পোড়ানোই পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধতম পাপ," তখন তিনি ভালোবাসার নৈতিকতার এমন এক উচ্চতা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে সম্পর্কের ব্যর্থতা বা বিশ্বাসঘাতকতা সাধারণ ভুলের পর্যায়ে থাকে না তা হয়ে ওঠে আত্মার উপর করা এক গুরুতর অপরাধ।
এই পাপবোধই প্রেমিককে অহমিকা থেকে সরিয়ে এনে এক বিনম্র আত্মসমর্পণের দিকে নিয়ে যায়। দহন এখানে কেবল ব্যক্তিগত দুঃখ নয়, এটি মুক্তির জন্য আবশ্যকীয় শুদ্ধিকরণ।
২. প্রেমিকা থেকে পরিত্রাতা: বিশ্বাসের নির্মাণ
কাব্যগ্রন্থের শিরোনামটিই এক অসাধারণ প্রতীকী বিবর্তন নির্দেশ করে। যে প্রিয় মানুষটি একসময় জাগতিক প্রেমের কেন্দ্রে ছিল, বিরহের আঘাতে সে আর রক্তমাংসের থাকে না; বরং দূরবর্তী কিন্তু অপরিহার্য 'প্রার্থনা'-য় রূপান্তরিত হয়।
বিচ্ছেদ এই কাব্যে ধ্বংস নয়, বরং পবিত্র দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল। প্রেমিকা আর কাঙ্ক্ষিত বস্তু নয়, বরং আশ্রয়।
এই রূপান্তর ইঙ্গিত দেয় যে, কবি জীবনের চরম দুর্দিনেও ধ্বংস হননি; বরং মানবীয় সম্পর্কের অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে দিয়ে, ভালোবাসার ধারণাকেই এক স্থায়ী বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক অবলম্বনে পরিণত করেছেন। এই 'প্রার্থনা' একালের প্রেমিকের জন্য এক অদৃশ্য অভয়ারণ্য, যেখানে 'ফুলের মতো স্পর্শকাতর' প্রেমকে দখল নয়, শ্রদ্ধা জানানোই একমাত্র ধর্ম।
৩. মাটির মায়া ও ডানা মেলার দ্বৈরথ
এই কাব্যে একটি গভীর দ্বৈরথ বা সংঘাত কাজ করেছে: 'মাটির মায়া' (পৃথিবীর নশ্বর আকর্ষণ) বনাম 'ডানা মেলার আকাঙ্ক্ষা' (মুক্তির আধ্যাত্মিক আহ্বান)। একদিকে জীবন তাকে টিএসসি, কার্জন হল, বা পরিচিত জনপদের স্মৃতিতে বেঁধে রাখে, অন্যদিকে আত্মা চায় সেই বাঁধন ছিঁড়ে উড়ে যেতে।
কবি যে পাখা চান, তা শুধু ভ্রমণের জন্য নয়; তা হলো বন্ধন, লোভ ও নশ্বরতার শৃঙ্খল থেকে আত্মার উড্ডয়ন। তিনি যে পৃথিবীতে মৃত্যু আর অপার্থিব বেদনার উপস্থিতি দেখেছেন, সেই পৃথিবীর ভার তার জন্য অসহ্য। এই দ্বৈরথ কাব্যকে এক গভীর ট্র্যাজেডির স্বাদ দেয়, যা আধুনিক জীবনের হতাশা ও আশার সংমিশ্রণকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তোলে।
"বেদনার দুর্দিনে তুমি আমার প্রার্থনা হও" একটি কাব্যগ্রন্থ হিসেবে কেবল একটি সাহিত্যকর্ম নয়, এটি হলো এক সংবেদনশীল মানুষের আধ্যাত্মিক জার্নি যেখানে প্রেমই দেখিয়েছে কিভাবে জাগতিক বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে এক বিশ্বাসের আশ্রয়ে ফিরে যেতে হয়। ২০২৬ বইমেলায় এই গ্রন্থটি অবশ্যই পাঠকের চিন্তাজগতে এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
এসআর