চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গাছ ছেঁটে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাবিবুর রহমান। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও থেমে নেই তার শ্রমের পথচলা। প্রায় ৭০ বছরের এই বৃদ্ধ এখনো প্রতিদিন সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েন কাজের সন্ধানে।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের মধ্য ফেকামারা বড়-বাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান হাবু ৷ গাছ ছাঁটানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তবুও কখনো হাত পাতেন নি কারো কাছে৷ বুকে চাপা দুঃখ সাথী করে এমন কঠিন কাজ করেই চলেছেন।
বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকালে একটি সাইকেল নিয়ে কাজের খুঁজে বের হন তিনি৷ কোনদিন কাজ মিলে আবার কখনো না পেয়ে মলিন মুখেই বাড়ি ফিরে আসতে হয়৷ এভাবেই দীর্ঘ চার যুগের বেশি সময় ধরে চলছে এই গাছ ছাঁটানোর কাজ।
দেখা যায়, জরাজীর্ণ শরীল নিয়ে বড়ো গাছে ওঠতে কাঁপছে শরিল৷ এমন শরীল নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ করতে হচ্ছে৷ কাজ কমবেশি অনুযায়ী কখনো পাঁচশত টাকা কখনো এক হাজার টাকা মিলে। যতো বেশি কাজ ততো টাকা মিলে কিন্তু এই বয়সে খুব বেশি কাজ করতে পারেন না তিনি৷ তীব্র শীতে ও বর্ষায় বৃষ্টির দিনে কাজ বন্ধ থাকে। তখন অসহায় হয়ে বেকার সময় কাটাতে হয়৷ দুই ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে হাবিবুরের৷ ছেলেরা যে যার মতো থাকেন আলাদা৷ ভবঘুরে স্বভাবের ছেলেরা তাদের পিতার খোঁজ নেয়না৷ দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধ হাবিবুর৷ কিছুদিন আগে এক মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়৷ চিকিৎসার পিছনে জমানো সব পুঁজি শেষ করেও ভালো করতে পারছেন না৷ এলাকার মানুষ এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে নিষেধ করলেও এই কাজ ছাড়া তো উপার্জন বন্ধ হবে৷ পেটের দায়ে করতেই হচ্ছে৷
বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, ''এই বয়সেও আমি সরকারি বয়স্ক ভাতা সহ কোনরকম সুবিধা পাচ্ছি না৷ মেম্বারের পিছনে ঘুরেও কাজ হয়না৷ শেষ বয়সে ইচ্ছে হয় একটু আরাম করতে কিন্তু পুঁজি ছাড়া তো কোন কিছু করাও সম্ভব নয়৷ একটি দোকান আর পুঁজি পেলে শেষ সময়টা বসে কাটাতে পারতাম। সংগ্রামের পর থেকে গাছ ছাঁটানো পেশায় আমি৷ এখন শরীল আর কুলোয় না৷ যে কোন সময় অঘটন ঘটতে পারে তবুও নিরুপায় হয়ে কাজ করি৷''
জালালপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ''শীঘ্রই এই সংগ্রমী বৃদ্ধকে বয়স্ক ভাতার আওতায় নিয়ে আসবো৷ এছাড়াও আমার পরিষদের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহায়তা যা সম্ভব করা হবে৷''
এসআর