বরিশাল নগরে একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে ঢুকে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে এক পুলিশ সদস্য।
সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) রাতে বরিশাল নগরের গোড়াচাঁদ দাশ রোডের আল জামিয়া মাদ্রাসা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফাকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এশিয়ান টেলিভিশন বরিশালের ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সাথেসাথে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ একাধিক সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
অপরদিকে হামলাকারী নাভিদ আনজুমকে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। নাভিদ আনজুম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আমানতগঞ্জ ফাঁড়িতে কর্মরত।
আহত ফিরোজ মোস্তাফা জানান, খেলোয়াড় পরিচয়ে নাভিদ আনজুম দীর্ঘদিন আগে তার সাথে সখ্যতা গড়েন। এর সুবাদে সে প্রায়ই তার অফিসে আসতেন। পরবর্তীতে সে মাদক সেবন ও অনলাইন ক্যাসিনো চক্রের সাথে জড়িয়ে যায়। এরপর হঠাৎ করে ই-মেইল আইডি হ্যাক হওয়ার অভিযোগ তুলে নাভিদ ফিরোজ মোস্তফার ওপর দায় চাপান। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানানভাবে ঝামেলা করে আসছিলো নাভিদ।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আমার পারিবারিক কিছু ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। তবে এতে সুবিধা করতে না পেরে গত ২৫ অক্টোবর রাতে নাবিদ লোকজন নিয়ে ফ্ল্যাটে এসে আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করে। ওই দিন থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নাভিদ ভয় দেখিয়ে আমাকে আটকে রাখে এবং উলঙ্গ করে নির্যাতনের পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে গত ২ নভেম্বর লোকলজ্জা ভেঙে ৯৯৯-এ কল দিয়ে সহযোগিতা চাই। পরে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, উদ্ধারের পর থানায় গেলেও পুলিশ সদস্য হওয়ায় নাভিদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি থানার তৎকালীন ওসি মিজানুর রহমান। এ কারণে ৩ নভেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। গত ১৩ নভেম্বর অভিযোগ তদন্ত করার জন্য পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ডাকেন উপ-কমিশনার (ডিবি) আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু সেখানে বসে পুনরায় হুমকি দেয় কনস্টেবল নাবিদ। যার ভিডিও আমার সহকর্মীদের কাছে রয়েছে।
ফিরোজ অভিযোগ করেন, কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ মামলা না নিলেও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাঈদ নাভিদের পক্ষ নেয় এবং আমার ল্যাপটপ নিয়ে যায়। পরে ওসি মিজানুর রহমান বিষয়টি মীমাংসা করে দিবেন বলে ঘোরাতে থাকেন। তবে পরে কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিলে ওসি মিজানুর রহমান, এএসআই সাঈদ ও নাভিদ আনজুম আরও ক্ষুব্ধ হয়।
এর ধারাবাহিকতায় সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) রাতে কনস্টেবল নাভিদ গোড়াচাঁদ দাশ রোডের বাসায় ঢুকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। একপর্যায় ফিরোজকে রুমের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান কনস্টেবল নাবিদ। নিজেকে বাঁচাতে ফিরোজ ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চান। পরে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন উল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আমি এখানে নতুন এসেছি। তাদের মধ্যে পূর্বে কোনো বিরোধ ছিলো কিনা আমার জানা নেই। এই ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, অভিযোগ না দেওয়ায় পুলিশ সদস্যকে আমানতগঞ্জ ফাঁড়ি ইনচার্জের জিম্মায় দেয়া হচ্ছে। তবে সুস্থ হয়ে হামলার ঘটনায় মামলা করার কথা জানিয়েছেন আহত সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সাংবাদিককে হাতুড়ি পেটা করার ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
এসআর