চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় অবৈধভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠেছে ২৭টি ডেন্টাল কেয়ার। যেগুলো চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তার মধ্যে ৪-৫টির মতো বিডিএস পাশ করাসহ বৈধ কাগজপত্র থাকলেও বাকিগুলোর কোনো কাগজপত্র নেই বলে জানা গেছে।
এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের ভূতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এসব ভুয়া ডাক্তারদের চিকিৎসায় বিভিন্ন মানুষ ভোগান্তির শিকার হলেও স্বাস্হ্য প্রশাসন কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেনা। যে কারনে প্রতারিত হচ্ছেন এ এলাকার সাধারণ মানুষগুলো। অনেকের মূল্যবান দাঁত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পদুয়া বাজারে সবচেয়ে বেশি ডেন্টাল কেয়ার রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উভয়পাশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত অন্তত ১৪টি ডেন্টাল কেয়ার সাইনবোর্ড লাগিয়ে কোন প্রকার ডিগ্রি না থাকা সত্বেও দেদারসে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই নামের আগে লিখেন ডেন্টিস্ট শব্দটি। তৌহিদুল ইসলাম নামক একজন রয়েছেন, যিনি বাহারী বিজ্ঞাপন দিয়ে একজনই সামলান কাইফা ডেন্টাল, তাহরীম ডেন্টাল ও মোস্তফা ডেন্টাল নামক তিনটি চেম্বার।
অন্যদিকে, কোন ডিগ্রি ছাড়াই নামের আগে ডেন্টিস্ট লাগিয়ে পদুয়া বাজারে আরো ডজন খানেক চেম্বার খুলে বসে আছেন। এগুলো হচ্ছে শফিকুল ইসলামের সাফা ডেন্টাল, আব্দুল কাদেরের আইডিয়াল ডেন্টাল, এইচ এম দেলোয়ারের জননী ডেন্টাল, নাছির উদ্দীনের নাছির ডেন্টাল, আবু তাহেরের মা ডেন্টাল, রেজাউল করিমের লাইফ ডেন্টাল, নাছির উদ্দীনের পদুয়া ডেন্টাল, মাহবুবুর রহমানের মোজাহেরিয়া ডেন্টাল, শাহ আলমের মডার্ন ডেন্টাল।
তাছাড়া লোহাগাড়া বটতলী স্টেশনে রয়েছে স্মাইল প্লিজ, রাফিয়া ডেন্টাল, আলী ডেন্টাল, বদিউল আলম রানার নিউ মা ডেন্টাল, দরবেশহাট রোড়ে জাহাঙ্গীর আলমের মা ডেন্টাল, আব্দুল্লাহ ডেন্টাল, রিমন বড়ুয়ার রিমন ডেন্টাল, রিদোয়ান ডেন্টাল, নুরুল কবির হেলালীর হেলালী ডেন্টাল উল্লেখযোগ্য।
জানতে চাইলে মোজাহেরিয়া ডেন্টালের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার কোন ডিগ্রী বা প্রশিক্ষণ নেই, আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’ প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে কেমন- তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
অপর দিকে, তিনটি চেম্বার খুলে চিকিৎসা দেওয়া তৌহিদুল ইসলামের নিকট জানতে চাইল তিনি ডেন্টালের উপর ডিএমটি ও এফটিসি ট্রেনিং নিয়েছেন বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন চিকিৎসক জানান, ‘উপজেলা স্বাস্হ্য কর্মকর্তা আমাদের ডাঃ না লিখে চিকিৎসা সেবা দিতে বলেছেন।’
উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় জনগণের সঙ্গে বছরের পর বছর প্রতারণা করে ব্যবসা চালিয়ে এলেও কোনো অবৈধ ডেন্টাল কেয়ার বন্ধ করতে পারছে না প্রশাসন।
এসব ভূতুড়ে চিকিৎসকদের চিকিৎসার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার সি়ভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ এসব চিকিৎসা দিতে পারবে না। কোনোভাবেই যেখানে সেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে দন্ত চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। আইনবহির্ভূতভাবে যেসব ডেন্টাল ক্লিনিক তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে, তাদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ইউএনও মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্হ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকার বাইরের অবৈধ ডেন্টাল কেয়ারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানে অবৈধ, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইখা