আধুনিকতার পালাবদলে হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর। এখন আর দেখা মেলেনা পিঁড়ি কিংবা টুলে বসে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের সুনিপুণ হাতে চুল ও দাড়ি কাটার সেই দৃশ্য। অনেক পেশার মতো নরসুন্দরের এই পেশাটিও বদলে যাচ্ছে।
বগুড়ার শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী বারদুয়ারী হাটেও এখন শুধু কালেভদ্রে দু’য়েকজন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর দেখা যায়। যারা আছেন, তাদেরও টিকে থাকতে অবিরত সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল ও দাড়ি যা নিয়ে ভাবনারও শেষ নেই। বিশেষ করে ছেলে ও পুরুষদের ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে চুল ও দাড়ি। সৌন্দর্যবর্ধনে নরসুন্দরদের কদর ও প্রয়োজনীয়তাও অনেক বেশি। যাদের কাজই চুল ও দাড়ি কেটে মানুষকে পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় করে তোলা, তারাই নরসুন্দর বা নাপিত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই পিঁড়ি কিংবা টুলে বসে চুল কাটার দৃশ্য প্রায় হারিয়ে গেছে।
একসময় গ্রামগঞ্জের হাটবাজার, এমনকি শহরের অলিগলিতেও টুল, চেয়ার বা পিঁড়িতে বসে বৃদ্ধ, যুবক ও শিশুদের চুল কাটতে ব্যস্ত থাকতেন এসব নাপিত বা নরসুন্দর। একটি কাঠের বাক্সে ক্ষুর, কেঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকিরি, পাউডারের পাশাপাশি বসার জন্য থাকত জলচৌকি কিংবা পিঁড়ি। সেগুলোতে বসিয়ে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে পিতলের চিরুনি আর কেঁচি দিয়ে চুল কাটতেন তারা। আশি-নব্বইয়ের দশকে পিঁড়িতে বসিয়ে গ্রামবাংলার মানুষের চুলদাড়ি কাটার সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর দেখা যায় না।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবনের গতিধারায় পরিবর্তন ও নতুনত্বের কারণে এখন সর্বত্রই গড়ে উঠেছে জেন্টস পার্লার বা সেলুন। বাহারি রঙ ও স্টাইলের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে হাটবাজারের ভ্রাম্যমাণ সেলুনগুলো। অধিকাংশ মানুষ এখন সেলুনেই চুল কাটাতে অভ্যস্ত। হাটবাজারে পিঁড়িতে বসে চুল কাটা নতুন প্রজন্মের কাছে এখন যেন গল্পের মতো।
উপজেলার রানীরহাট বাজারের সুবাস শীল বলেন, “আমি সপ্তাহে মাত্র দুই দিন হাটে ভ্রাম্যমাণভাবে কাজ করি। বংশ পরম্পরায় ৪০/৪৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। ১৫/২০ বছর আগে চুলদাড়ি কাটার দাম ছিল ৩৫ টাকা। তখন যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলত। কিন্তু এখন শুধু চুল কাটতে ২৫/৩০ টাকা নেয়া হলেও সারাদিনে ২/৩’শ টাকার বেশি আয় হয় না। যা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলছে।”
চুল কাটাতে আসা আব্দুল শেখ ও মোঃ রতন জানান, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের কাছেই চুল কাটাচ্ছি। আধুনিক সেলুন থাকলেও সেখানে খরচ অনেক বেশি, যা আমাদের সামর্থের বাইরে।”