মাত্র তিন মাস হলো ঘরে মিটার লাগানো হয়েছে। বিদ্যুতের তেমন ব্যবহার নেই। জ্বালানো হয় কেবল দুইটি বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী বাতি আর চলে একটি বৈদ্যুতিক পাখা। তবে, একমাস যাবৎ শীতের কারণে পাখা বন্ধ। প্রতি মাসে বিল আসে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। কিন্তু সর্বশেষ নভেম্বরে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭০২ টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ধোপাকুড়া গ্রামের গার্মেন্টস শ্রমিক আজিজুল হকের বাড়িতে।
জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক আজিজুল হকের বাড়িতে সম্প্রতি পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ বিলের একটি অনুলিপি পাঠানো হয়। গত রবিবার ছিল বিল পরিশোধের শেষ তারিখ। আজিজুল ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের কাজে থাকায় তার চাচা জালাল উদ্দিন বিল পরিশোধ করতে স্থানীয় বাজারের দোকানে গেলে দোকানদার জানায় তার এ মাসের বিল প্রায় দুই লাখ টাকা। এ কথা শুনে আঁতকে ওঠেন জালাল উদ্দিন। পরে মিটার গ্রাহক আজিজুলকে জানান। এরপর স্থানীয়দের পরামর্শে বিদ্যুৎ অফিসকে বিষয়টি অবহিত করলে একজন কর্মকর্তার ভুল হয়েছে জানিয়ে তা সংশোধন করে ৯৯ টাকার পূনরায় একটি নতুন বিলের কাগজ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে আজিজুল হক পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। নিজে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। গ্রামের বাড়িতে নিজের ঘরে তার বৃদ্ধা দাদি একাই থাকেন। ঘরে ও বাহিরে একটা করে মোট দুটো বাতি এবং গরমের সময় একটি বৈদ্যুতিক পাখা চলত। তবে শীতের সময় শুধু দুটি বাতিই জ্বলে।
গত দুই মাসে বিদ্যুৎ বিল স্বাভাবিক থাকলেও নভেম্বর মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে পৌণে দুই লাখ টাকার হিসাব শুনে তিনি ও তাঁর পরিবার ভড়কে যান। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। এরপর পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাঁর বিল ঠিক করে দিয়েছে। ওই কার্যালয়ে এক কর্মকর্তার ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। বিদ্যুৎ কার্যালয়ের লোকজনের ছোট–বড় এমন ভুলের কারণে গ্রাহকেরা প্রায় সময় হয়রানির শিকার হন বলে দাবি করেন আজিজুল। এ ধরনের ভুল কমিয়ে স্বচ্ছ ও নির্বিঘ্নে সেবা নিশ্চিত করতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
আজিজুলের চাচা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আজিজুল ঢাকায় থাকার কারণে আমিই বিল দেই, গতকাল বিল দিতে ধোপাকুড়া বাজারের জাহাঙ্গীরের দোকানে যাই, দোকানদার বিল দেখে তো আমায় বলে এতো বিল কেন? তারপর আমি কয়েকজনের কাছে জানাই। পরে বিদ্যুৎ অফিসের লোক এসে নতুন আরেকটা বিল দিয়ে গেছে।’
জালাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘ভাতিজার ঘরে মাত্র দুইটা বাতি জলে, তাও অল্প সময়ে, আগে তো ১০০ থেকে দেড়শো টাকা বিল আসতো। কিন্তু এবার যে এতো বিল আসলো। আমার তো মাথায় ধরেনা। বিদ্যুৎ অফিসের হয়রানী বন্ধের দাবি জানাই।’
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নালিতাবাড়ী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সময়ে প্রকৃত বিল করে গ্রাহক কপি গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর এ কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাকে কারণ দর্শনো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গাফিলতির জন্য তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ইখা