সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী সোনামুখী মেলায় চলছে জুয়ার আসর। মেলায় রাতে পুলিশ টহলে থাকলেও তাঁরা জুয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না। অথচ জুয়া পরিচালনাকারীদের দাবি, তারা নাকি সবাইকে ম্যানেজ করেই প্রকাশ্যে এমন কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সোনামুখী উচ্চবিদ্যালয়ের দক্ষিণে প্রায় এক কিলোমিটার ফাঁকে নিশি বাড়ি (সোনামুখী শ্মশান ঘাট এলাকা) নামক জায়গায় জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। সেখানে অর্ধশতাধিক জুয়ারি জুয়া খেলায় মেতেছেন। 'পড়ুক পড়ুক' হাকডাকে শুরু হয় প্রতিটি চাল। একটি বক্সের ভিতর পাঁচটি গুটি তুলে সেগুলো নেড়েচেড়ে ফেলা হয়। আর পাঁচটি ঘরে জুয়ারিরা টাকা ফেলেন। তাসের হরতন, রুইতন, টেক্কা, চিড়াসহ বিভিন্ন ছবি রয়েছে গুটিগুলোতে। আসরের চারপাশে জনগণ উৎসাহ নিয়ে জুয়া খেলা দেখছেন। সেখানকার বেশিরভাগ লোকই জুয়া খেলছেন। সর্বনিম্ন পাঁচশ টাকায় জুয়া খেলা যায়। ৫০ হাজার টাকা পর্যন্তও জুয়া খেলছেন অনেকে।
জুয়া খেলতে যাওয়া আসাদুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'প্রতিদিন এখানে জুয়ার আসর বসে। আমরা খেলি। দূরদূরান্ত থেকে লোক এসে খেলে এখানে। রাত আটটা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, 'সিএনজি নিয়ে লোকজন জুয়া খেলতে আসে। সারা রাত চলে খেলা। বাবলু নামের এক ব্যক্তি এই আসর দেখভাল করেন। তিনিই সব ম্যানেজ করেছেন।'
রতন নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'ভাই এখানে তো সেই জুয়া চলে। প্রতিরাতে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হয় এখানে। হাতে গোনা কয়েকজনের লাভ হলেও বেশিরভাগ লোকেরই লোকসান যায়।'
স্থানীয় এক নরসুন্দর বলেন, 'আমরা দেখতে এসেছি। সবাই জুয়া ধরে। পাঁচশ টাকা দিয়ে একজন ১৫ হাজার টাকা পেলো। আবার ৬ হাজার টাকা একজন এক দাইনেই লস দিলো।'
এ ব্যাপারে জুয়া নিয়ন্ত্রণকারী কাজীপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সোনামুখীর বাসিন্দা বাবলু মিয়া জানান, 'কোন জায়গায় ফাঁক রাখতে চাই না। সবাইকেই ম্যানেজ করেছি। থানা পুলিশ, সাংবাদিক সবাইকেই ম্যানেজ করেছি। যে কয়দিন চালাতে পারি এভাবেই চলবে।'
সোনামুখী মেলার ইজারাদার বিএনপি নেতা ফজলুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম বলেন, 'মেলায় তো এ ধরনের কোন ঘটনা নেই। পুলিশ টহলে থাকে। খবর পাওয়ার পরেই আমরা ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।'
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, 'মেলায় জুয়া চালানোর অনুমতি নেই। এটা কোনভাবেই চালাতে পারবে না। এর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।'
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'জুয়া একেবারে নিষিদ্ধ। আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।'
জানা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রায় তিনশ বছর ধরে সোনামুখীতে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা বসে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও মেলা বসেছে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত মেলা চলার কথা রয়েছে। এখানে অশ্লীল নাচ গান, যাত্রা, সার্কাস, জুয়া, মাদক ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। কিন্তু প্রকাশ্যে জুয়ার আসর বসানো হয় মেলায়। মেলার আমেজ বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বেশি থাকে। ছোট্ট জায়গায় অতিরিক্ত কসমেটিকসের দোকান ও বিভিন্ন রাইড বসানোতে অপরাধ বেড়েছে। প্রতিদিনই উঠতি বয়সী কিশোরদের ঘটছে মারামারি। নারী শিকার হচ্ছেন ইভটিজিংয়ের। সচেতন মহল বলছেন, শুধু কাঠের ফার্নিচার আর মিষ্টির দোকানগুলো রেখে সব কার্যক্রম বন্ধ করা খুব জরুরি।
এসআর