তথ্য ও সম্প্রচার; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, এটা তো সত্য কথা যে ৫৪ বছর পরও যখন গণ-অভ্যুত্থান হতে হয়, তার অর্থ হলো একাত্তরের যে স্বপ্ন ছিল, যে প্রত্যাশা ছিল, রাষ্ট্র সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ৮টার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটা ভিত্তি স্থাপন হবে। যেই ভিত্তিটা গণতন্ত্রকে যেমন সুদৃঢ় করবে, তেমনি জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে। একটা বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্নটা আমাদের এখনো অধরা রয়ে গেছে, সেটি আমরা পূর্ণতার দিকে যাত্রাটা শুরু করতে পারব।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের নির্বাচন আছে, আমরা খুবই আশা করছি, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথে সুদৃঢ় একটা যাত্রা শুরু করব। এজন্য যেখানে কেবল মাত্র একটা নির্বাচনই হচ্ছে না একটা গণভোটও হচ্ছে। যেখানে সংস্কার প্রশ্নে বড় কতগুলো বিষয়ে জনগণ তাদের মতামত জানাতে পারবে। এখন তার ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্রের যাত্রাটা এবার পরিবর্তিত আকারে শুরু হতেই পারে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা খুবই দুঃখজনক বিষয় যে আমাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেক সময় দেখা যায়, আমরা যুক্তি দিয়ে, তর্ক দিয়ে না করে হত্যাচেষ্টাটাকে একটা অস্ত্র হিসেবে নিই, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কাপুরুষোচিত, এর মধ্যে তো কোনো বীরত্ব নেই।
তিনি বলেন, আপনার যদি শক্তি থাকে, আপনি জনগণের মুখোমুখি হন। জনগণের মুখোমুখি কীভাবে হতে হয়, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তো সবার কাছে স্পষ্ট। সেটা না করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই যে একটা সংস্কৃতি চলে এসেছে, এটা কোনোভাবেই নতুন বাংলাদেশে নেওয়ার কোনো সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না।
সরকার জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা টেন্ডেন্সি দেখি খুব, আপনারা ব্যর্থ কি না, আপনারা সফল কি না, এক-দেড় বছরের সরকারের ব্যর্থতা আর সফলতার গল্পটা একটু অন্যভাবে বিচার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বটা নিয়েছিলাম, তখন একটা একেবারে ভেঙে পড়া অবস্থা নিয়ে আমরা কাজটা শুরু করি। সেই ভেঙে পড়া অবস্থাকে জোড়া লাগিয়ে রাষ্ট্রটাকে আবার একটা যাত্রার দিকে নিয়ে যাওয়াই ছিল আমাদের কাজ। আমরা সেই কাজটা করেছি। সেখানে আমি এই সরকারকে ব্যর্থ বা সফল কোনোটা বলারই সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না। এ সরকার তখনই সফল হবে যখন দেখা যাবে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই সরকারের যাত্রা, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, বিচার করা এবং সংস্কার করা সেগুলো শেষ পর্যন্ত গিয়ে আমরা সফল হব।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, নিরাপত্তা দেওয়ার যতটা স্বাভাবিক প্রস্তুতি থাকে, সবটুকু স্বাভাবিক প্রস্তুতি আমাদের আছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের আঘাতটা নিয়ে, স্বাভাবিক প্রস্তুতির চেয়েও বেশি কিছু আমাদের নিতে হবে। কারণ প্রতিপক্ষ আরও বেশি সংগঠিত এবং পেছন দিক থেকে আঘাত করছে। এই যে পেছন দিক থেকে আঘাত, এর বিপরীতে আমাদের আরও বেশি ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা নিচ্ছি। আমরা নিরাপত্তা আরও জোরদার করছি।
নির্বাচনে আইন পরিস্থিতি কেমন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা হলো সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হবে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকে ভোট দিতে পারবে, শান্তিপূর্ণভাবে লোকে ভোট দিতে পারবে। এখন এটাকে ব্যাহত করার জন্য একটা শক্তি সমাজে কাজ করছে। সেই শক্তিকে একইসঙ্গে আমাদের প্রতিহত করতে হচ্ছে, একইসঙ্গে আমাদের একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশার জায়গা থেকে আমরা বলে দিতে পারি, আমরা শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বতঃস্ফূর্ত একটা নির্বাচনের দিকে তাকাচ্ছি, অবশ্যই এর বিপরীতে দেখতে পাচ্ছি আরও বেশি প্রকট করে, প্রতিপক্ষ যে আঘাতগুলো হানছে, সেগুলো আসলে রক্তাক্ত ও সংঘাতময়। সেটার জন্য আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা জনগণের উদ্দেশে বলা দরকার, আমাদের, জনগণকে ভীত করে ফেলার একটা প্রচেষ্টা চলছে। সরকারের দায়িত্ব হলো, জনগণকে আশ্বস্ত করা, যেন জনগণের মধ্যে ভয়ের সংক্রমণটা না হয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এইচএ