১৬ ডিসেম্বর সারাদেশ যখন বিজয়ের আনন্দে ভাসছে, তখনও রাজবাড়ীতে চলছে অবাঙ্গালী বিহারীদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ।
এ সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে প্রতিবেশি জেলার মুক্তিযোদ্ধারা যোগ দিয়ে অবাঙ্গালী বিহারীদের পরাজিত করে দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ীকে শত্রু মুক্ত করে। যুদ্ধে শহীদ হন খুশি, রফিক, সফিক, সাদিসহ অনেকে।
রেলের শহরের সুবাদে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজবাড়ী ছিল বিহারী অধ্যুুষিত এলাকা। এখানে ছিল প্রায় ২০ হাজারের বেশি অবাঙ্গালী বিহারীদের বসবাস, যুদ্ধের সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মিলিটারী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস। এছাড়াও তারা ছিল সশস্ত্র। যে কারণে রাজবাড়ীকে শত্রু মুক্ত করতে বেগ পেতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
১৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পন করলেও রাজবাড়ী শহর তখনো বিহারীদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি। ১৪ ডিসেম্বর থেকে একে একে জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুক্তিবাহিনী এসে জেলা শহরে সংগঠিত হয়। এ খবরে বিহারীরা রেল লাইনের পাশে অবস্থান নেয়। এবং লোকো শেড থেকে ড্রাই-আইস ফ্যাক্টরী পর্যন্ত মালগাড়ী দিয়ে ব্যূহ তৈরি করে।
মুক্তিযোদ্ধারা বিহারীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্শন করতে থাকলে মালগাড়ীর কারণে কোন সুবিধা করতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে বিহারীদের ঘায়েল করতে বিকল্প হিসেবে যশোর থেকে আনা মর্টারের গুলি বর্শন শুরু করলে বিহারীদের সাথে তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এক পর্যায় বিহারীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ী স্বাধীন হয়।
অবাঙ্গালী বিহারীদের বসবাস ছিল শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনী, ষ্টেশন কলোনী ও লোকোশেড কলোনী এলাকায়। পাকিস্থান আমলে এদের প্রচন্ড প্রভাব ছিলো এই এলাকাতে। পুরো রেলখাত ছিলো তখন তাদের দখলে। পাক বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারীরা তাদের সাথে যোগসাজসে নির্বিচারে চালাতে থাকে জ্বালাও-পোড়াও এবং গণহত্যা।
১৯৭১ সালে ২১ এপ্রিল বুধবার রাত ৩টার দিকে আরিচা থেকে বেলুচ রেজিমেন্টের মেজর চিমারের নেতৃত্বে ‘রণবহর’ নিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে প্রথমবারের মত ঝাপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী। এ থেকেই রাজবাড়ীতে চলতে থাকে অবাঙ্গালী, বিহারী, পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ‘বিহারী অবাঙ্গালীরা আধুনিক অস্ত্রে-সজ্জে সজ্জিত এবং সংখ্যায় বেশি থাকায় রাজবাড়ী শত্রু মুক্ত করতে দুইদিন সময় বেশি লাগে। ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ী স্বাধীনের ইতিহাস বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে জানাতে কর্মসূচি থাকলে ভাল হতো।’
এসএম