সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয়জন বাংলাদেশি সেনা সদস্যের মধ্যে কুড়িগ্রামের দুই বীর সন্তানের মৃত্যুতে জেলাজুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নিহত এই দুই সেনাসদস্যের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, শোকে বিহ্বল পরিবার।
নিহত সেনাসদস্য শহিদ শান্ত মণ্ডলের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তার বাবা সাবেক সেনাসদস্য (মৃত) নুর ইসলাম মণ্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। শান্তর বড় ভাই সোহাগ মণ্ডল সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ল্যান্স করপোরাল পদে রয়েছেন।
নিহত শান্ত মণ্ডলের স্বজনরা জানান, ‘উপরওয়ালা আমাকে আরও ধৈর্যশীল করুক। আমি আরও নীরব হতে চাই।’ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিজের ফেসবুকের স্টোরিতে এই কথা লিখে মিশনের দায়িত্ব পালনে যান শান্ত মণ্ডল। তার দু’ঘণ্টা পর পরিবারের কাছে খবর আসে শান্তর আরও নীরব হওয়ার খবর। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন শান্ত। পরিবারে নেমে আসে আহাজারি। চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বৃষ্টি নির্বাক। মায়ের চিৎকার চলে অবিরত।
শান্তর স্ত্রী বৃষ্টি জানান, ‘শনিবার রাত ৮টার দিকে শেষ কথা হয়েছে শান্তর সঙ্গে। সে সময় বলেছিল ডিউটিতে যাবে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পান তারা। একই সময় কথা হয় মায়ের সঙ্গেও।
শান্তর ছোট ভাই সজিব বলেন, ‘শনিবার রাত ৮টার দিকে সে ফেসবুকে স্টোরি দিয়েছে। লিখেছে ‘উপরওয়ালা আমাকে আরও ধৈর্যশীল করুক। আমি আরও নীরব হতে চাই।’ এর দুই আড়াই ঘণ্টা পর খবর পাওয়া যায় সে বেঁচে নেই।’
নিহত শান্তর পরিবার জানায়, ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন শান্ত। চলতি বছরের নভেম্বরে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে হামলায় মারা যায়।
ছেলের মৃত্যুর সংবাদে শান্ত মণ্ডলের মা সাহেরা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সন্তানের মরদেহ দেখার আকুতি জানাচ্ছেন বারবার। প্রতিবেশী ও স্বজনদের কান্নায় পুরো এলাকা ভারী হয়ে উঠেছে।
সুদানে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত আরেক শান্তিরক্ষী মমিনুল ইসলামের (৩৮) বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়ে, মা-বাবা, ভাই রয়েছে। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ের বয়স চার বছর।
মমিনুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুর খবরে বাড়িতে মাতম চলছে। প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করছেন। মমিনুলের মৃত্যু শোকে স্ত্রী ও মা মূর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
মমিনুলের বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক ভালো মানুষ। এলাকার সবাই তাকে ভালোবাসে। আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন বলেই হয়তো তার শহীদি মৃত্যু হয়েছে। এখন আমরা তার লাশের অপেক্ষায় আছি।’
এফএস