এইমাত্র
  • কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতার পার্টিতে মমতা
  • কুড়িগ্রামের খাবার খেয়ে খুশি ভুটানের রাজা
  • বিশ্ববাজারে সোনার দামে রেকর্ড
  • নিরস্ত্র ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর বালিচাপা দিল ইসরায়েলি সেনারা
  • ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার!
  • দিনে ৭৮ কোটির বেশি মানুষ অভুক্ত, অথচ নষ্ট হয় ১০০ কোটির খাবার: জাতিসংঘ
  • বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের
  • প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত
  • কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা
  • ‘বিএনপির নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কিনেন না’
  • আজ শুক্রবার, ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    ওমরাহ হজ্জ করতে গিয়ে মাদারীপুরের রণি মারা গেছেন

    মেহেদী হাসান সোহাগ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মাদারীপুর প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম
    মেহেদী হাসান সোহাগ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মাদারীপুর প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম

    ওমরাহ হজ্জ করতে গিয়ে মাদারীপুরের রণি মারা গেছেন

    মেহেদী হাসান সোহাগ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মাদারীপুর প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম

    বাবাকে হারিয়েছে ১৬ বছর আগে। অনেক কষ্ট করে মা সন্তানদের মানুষ করেছেন। সাত সন্তানদের মধ্যে ছোট সন্তান হচ্ছে রুহুল আমিন রনি (৩৫)। মাদারীপুরে থাকা অবস্থায় অটোবাইক চালিয়ে সংসারের খরচ জোগার করতেন। গত প্রায় ৭ মাস আগে ধার দেনা করে জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরব যান।

    সৌদি আরবের খামিজ শহরের মিন্দিমাতাম নামেবএকটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। ইতিমধ্যেই একটু একটু করে দেনা পরিশোধ করতে ছিলেন। এরই মধ্যে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় ওমরাহ হজ্জ করতে যাবার সময় সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলের আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মাদারীপুরের কুনিয়া ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের রুহুল আমিন (রনি) মারা যান।

    এই ঘটনার খবর পাবার পর থেকেই মাদারীপুরের নিজ বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বৃদ্ধা মাকে কোনভাবেই শান্তনা দিতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া প্রতিবেশি।

    মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের মৃত এসহাক মাতুব্বরের ছেলে রুহুল আমিন রনি।

    খোজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের এসহাক মাতুব্বর তার পরিবার নিয়ে খুলনা থাকতেন। সেখানেই প্রায় ১৬ বছর আগে মারা যান। এরপর গত সাত বছর ধরে মাদারীপুরের নিজ বাড়িতে সাত সন্তান নিয়ে চলে আসেন এসহাকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম।

    অনেক কষ্ট করে চার ছেলে ও তিন মেয়েকে বড় করেছেন। তার একটি মেয়ে স্বামীর থেকে তালাকপ্রাপ্ত হওয়ায় চলে আসেন মায়ের সংসারে। ছোট্ট একটি দোচালা ঘর ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই। অভাবের সংসারে কিছুটা খরচ জোগারের জন্য রনি অটোবাইক চালানো শুরু করেন। এরপর বিয়ে করেন। সংসারে এক ছেলে তাসরিফ মাতুব্বর (৭) ও মেয়ে তাসফিয়া (৩) বড় হতে থাকলে, সংসারের খরচ বেড়ে যায়।

    কোন উপায় না পেয়ে ধার-দেনা করে জীবিকার সন্ধানে গত সাত মাস আগে সৌদি আরব যান রনি। সংসারের সবাই একটু সুখের সন্ধান পেতে থাকার মুর্হূতেই হারাতে হলো রনিকে। সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় ওমরাহ হজ্জ করতে যাবার সময় সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলের আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।

    এই খবর শোনার পর থেকেই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মা কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারাচ্ছেন। স্ত্রী আসমা বেগমেরও একই অবস্থা। ছোট মেয়ে তেমন কিছু না বুঝলেও ছেলে বাবা বাবা বলে কান্না করছে। খবর পেয়ে আসে পাশের লোকজনও ছুটে আসছেন রনি বাড়িতে।

    মা রাবেয়া বেগম বলেন, ১৬ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। এরপর অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছি। রণি অনেক ধার-দেনা করে সৌদি আবর গেছেন। সেখানে কাজ করতেন রনি। সৌদি আরব থেকে ফোন করে পরিচিত কয়েকজন জানিয়েছেন গাড়িতে আগুনে পুড়ে রনি মারা গেছে। তার লাশও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে আমার ছেলেও লাশও কি দেখতে পাবোনা। এত টাকা ধার-দেনা করেছে, তা কিভাবে শোধ করবো। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।

    শাশুরী রাশিদা বেগম বলেন, আমার মেয়ের স্বামী অনেক ধার-দেনা করে বিদেশ গেছে। এখন আমরা কি করবো। আমার মেয়ে এই ছোট ছোট দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে কিভাবে বেচে থাকবে। শুনেছি ঐ গাড়িতে আগুন লেগেছে। তাই হয়তো তার লাশ আগুনে পুড়ে গেছে। হয়তো তাই লাশটি পাওয়া যাচ্ছে না।

    স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেলো। আমার দুই সন্তান নিয়ে আমি একেবারে পথে বসে গেলাম। তাছাড়া এই ধার করা প্রায় ৪ লাখ টাকা আছে। তা কিভাবে শোধ করবো। আমি এব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চাই। যাতে করে আমরা দেনা শোধ করতে পারি আর এই ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একটু খেয়ে পড়ে বাচতে পারি। তাছাড়া আমার স্বামী মারা গেছে শুনছি। আরো শুনেছি তার লাশ নাকি পাওয়া যায়নি। যদি সে বেচে থাকে, তাহলে যেন তার ভালোভাবে চিকিৎসা হয়। আর মারা গেলে যেন, লাশটা বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়, এই দাবী সরকারের কাছে জানাই।

    রনির চাচাতো ভাই মিঠু মাতুব্বর বলেন, গতকাল রাতে বুধবার (২৯ মার্চ) আমরা রনির মারা যাবার খবর পেয়েছি। আমাদের এক আত্মীয় এই গ্রামেরই জসিম নামের একজন সৌদি আরবে রনির সাথে থাকতেন। জসিমই রাতে ফোন করে আমাদের জানিয়েছেন রনি ঐ গাড়িতে ছিলেন। দুর্ঘটনায় রনি মারা গেছেন। তবে তার লাশ পাওয়া যায়নি।

    কুনিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বর মো. হুমায়ন বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। রণি অনেক ধার-দেনা করে সৌদি আরব গেছেন। তাই পরিবারটি রনিকে হারিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই যদি সরকারীভাবে কোন সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে হয়তো পরিবারটির একটু উপকার হতো।

    মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইনউদ্দিন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে রনির পরিবারের জন্য যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব, তা করা হবে। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।

    এআই

    ট্যাগ :

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…