এইমাত্র
  • বাংলাদেশের জনগণ সহিংসতার শিকার হওয়ায় আমরা মর্মাহত: কানাডা হাইকমিশন
  • দুর্নীতির অভিযোগে রাশিয়ার সাবেক উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্রেপ্তার
  • সারাদেশে ৫৫০ মামলায় গ্রেপ্তার ৬ হাজারের বেশি
  • অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে বিচারের আওতায় আনা হবে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
  • মোবাইল ডাটা চালুর বিষয়ে বৈঠক রবিবার
  • ঝিনাইদহে পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
  • নতুন নির্বাচনের দাবি ড. ইউনূসের
  • সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশ বাহিনী: ধর্মমন্ত্রী
  • আম বাগান থেকে কৃষকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  • হামলাকারীরা পদ্মা সেতুতে আগুন লাগাতে গিয়েছিলো: ওবায়দুল কাদের
  • আজ শনিবার, ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ | ২৭ জুলাই, ২০২৪
    রাজনীতি

    রাজধানীর দারুসসালামে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা

    রাজু আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ১০:৫৩ এএম
    রাজু আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ১০:৫৩ এএম

    রাজধানীর দারুসসালামে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা

    রাজু আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ১০:৫৩ এএম

    রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালামে চিহ্নিত কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে সিয়াম (১৪) নামে সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া এক কিশোর নিহত হয়েছে।

    রোববার (২১ মে) দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে দারুসসালাম থানাধীন লালকুঠির বসুপাড়া এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

    নিহত কিশোর সিয়াম লালকুঠি বসুপাড়া এলাকার মোঃ আমিন ও স্বপ্না দম্পতির একমাত্র সন্তান এবং সে স্থানীয় লালকুঠি এলাকার কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

    এর আগে চলতি মাসেই অর্থাৎ গত ৪ মে বিকেলে দারুসসালাম থানাধীন বাগবাড়ী এলাকায় কবিরুল ইসলাম অপু নামে এক ব্যবসায়ীকে তার মায়ের সামনেই একইভাবে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিলো বলে জানা গেছে। সেই নৃশংস হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী অপু প্রাণে বেচে গেলেও তার একটি হাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি হারানোসহ তার ডান হাতে পেশীর হাড় ভেঙে যায়। তার ঘাড়ে স্পর্শকাতর স্থানে দেশীয় অস্ত্রের কোপে গভীর ক্ষত সৃষ্টির কারণে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লড়তে প্রাণে বেচে যান তিনি।

    এরই মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে একইভাবে প্রায় একই এলাকাতে হামলার শিকার হলেন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোর সিয়াম (১৪)। তবে সেই হামলায় গুরুতরভাবে আহত অপু মরতে মরতে প্রাণে বেঁচে গেলেও একইভাবে হামলার শিকার কিশোর সিয়াম তার মায়ের বুক খালি করে, দুনিয়ার সকল মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে নৃশংস হামলার পরপরই অকালে মর্মান্তিক মৃত্যুকে বরণ করে নিতে বাধ্য হলো।

    নিহত সিয়ামের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও দারুসসালাম থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে অজানা কারণে আকস্মিক হামলার শিকার ভুক্তভোগী সিয়ামের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে মারাত্মক আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় আহত সিয়ামকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত ও ময়না তদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে রাখা সিয়ামের লাশের পেটে, নাভীর ঠিক চার আঙ্গুল ওপরে ধারালো অস্ত্রের কোপে সৃষ্ট গভীর ক্ষত লক্ষ্য করা গেছে। ছুরিকাঘাতে পেটের ভেতরে অবস্থিত মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পাকস্থলীতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

    ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত সিয়ামের এক বন্ধু বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পূর্ব থেকেই নিহত সিয়াম, সীতল ও আসিফ আহমেদ নামে আমরা তিন বন্ধুসহ আরো ১৫/৩০ জন বন্ধুবান্ধব একই সাথে ছিলাম। সন্ধ্যার পর আনুমানিক রাত আটটা সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ায় অদূরের বসুপাড়ার আমাদের পরিচিত একটি আম গাছ থেকে আম পড়েছে ভেবে আম কুড়িয়ে পাওয়ার লোভে তিনজনই একসাথে সেই আম গাছটির নিচে পৌছই। কিন্ত গাছের নিচে কোনো আম পড়ে না পেয়ে আমরা গাছটি থেকে দু'চারটি আম পেড়ে নিয়ে আসতে চেষ্টা করি। এসময়ে লাইটের আলোতে আমরা দেখতে পাই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কিছু যুবক আমাদের দিকেই তেড়ে আসছে। এসময়ের লাইটের আলো ছিলো বিধায় অস্ত্রশস্ত্র হাতে আমাদের দিকে তেড়ে আসা বিশ থেকে পঁচিশজনের গ্রুপের সামনে থাকা রকি, ফরিদ, রুবেল ওরফে পটেটো রুবেল, ইমরান ও জার্মানি মাসুদকে দেখে আতংকে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।

    এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী নিহত সিয়ামের অপর এক বন্ধু বলেন, এসময় আগত দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত ২০/২৫ জনের সমন্বয়ে গ্রুপের সামনের ব্যাক্তিদের চিনতে পেরে আমরা সেখান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে দৌড়ে পালিয়ে যাই। কিন্ত এসময় সিয়াম যে আমাদের সাথে দৌড়ে আসতে না পেরে পেছনেই রয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল করিনি। পরে আমরা জানতে পারি সিয়ামের পেটে তারা ছুড়িকাঘাত করে মারাত্মক আহত করে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে গেছে।

    স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাৎক্ষণিকভাবে মারাত্মক আহত ও রক্তাক্ত সিয়ামকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে চোখের সামনে আমার বন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

    এঘটনায় দারুসসালাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের একটি সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। দারুসসালাম থানা পুলিশের বর্ণনা ও প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে এক যুবক ছুড়ি সদৃশ দেশীয় অস্ত্র হাতে অপর একজন কিশোরের ঘাড় শক্ত করে ধরে জোরপূর্বক সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় আরো বেশকিছু যুবক তাদের পেছন পেছন যাচ্ছেন।

    এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে সারারাত থানা কম্পাউন্ডে অবস্থানকালে ভোর আনুমানিক চারটার দিকে থানার কম্পিউটার রুমের ভেতরেই দারুসসালাম থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ জামাল উদ্দিন ও ঘটনার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দারুসসালাম থানার এস.আই সোহান আহমেদের উপস্থিতিতে এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিহত সিয়ামের মা স্বপ্না বেগম বুকফাঁটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

    তিনি দাবি করেন, ঘাড় ধরে জোরপূর্বক সামনের দিকে নিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া কিশোরই তার আদরের সন্তান সিয়াম (১৪)। অস্ত্র হাতে তার ঘাড় শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া যুবকের নাম ইমরান (২৩) ও তার পাশের যুবকের নাম আলী (২৫)। তারাই তার সন্তানকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছেন বলে দাবি তুলে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে থানার কম্পিউটার রুমের ভেতেরই আহাজারি করতে থাকেন স্বপ্না বেগম।

    এ বিষয়ে দারুসসালাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল বাশার বলেন, ইতোমধ্যে নিহত কিশোর সিয়ামের মা স্বপ্না বেগম বাদী হয়ে রুবেল ওরফে পটেটো রুবেল (২৫), আল-আমীন (২২), ইমরান (২৬), রকি (২৩), ফরিদ (২৬), মাসুদ ওরফে জার্মান মাসুদ (২৬), আলীমসহ সাতজনকে এজাহার নামীয় উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে এঘটনায় মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

    এআই

    ট্যাগ :

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…