প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়ার বয়স এখন আশির ওপরে। রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়স তো আশির ওপরে। এমনি তো সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই।
লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার এলাকার ম্যাথডিস্ট চার্চ হলে সোমবার (৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে খালেদা জিয়ার প্রতি কেন সহানুভূতি দেখাতে হবে? এখন তার আর কিছু করার নেই। আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তো আমি যেতে পারব না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। আর বয়স তো আশির ওপরে। এমনি তো সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই। আমি বলেছি, এখানে আমার কোনো এক্সিকিউটিভ অথরিটি নাই, কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তাকে আমরা পাঠাতে পারি না। কিন্তু এটাকে ইস্যু করে আন্দোলন সংগ্রাম। মায়ের প্রতি যদি এত দরদই থাকত, ছেলে তো একবার দেখতে যেত। তা তো যায় না। তাহলে বিষয়টা কী?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমখানার জন্য টাকা এসেছিল। সেই এতিমদের টাকা মেরে দিয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। যা-ই হোক বয়স্ক মানুষ। তার বড় বোন ভাই সব এসে কান্নাকাটি করে। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, কারাগারে বন্দি। তার বোনের কান্নাকাটিতে সত্যি কথা বলতে কি আমি তার সাজাটা স্থগিত করে বাসায় থাকার মতো ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার আছে। এখন তাদের আন্দোলন তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য পাঠায় বলতে পারেন, কোন দেশ পাঠায়? আবার কেউ কেউ আমাদের আঁতেলরা আছে, তারা আবার বলে, একটু কি সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সহানুভূতি আমাকে দেখাতে বলে।’
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালের হত্যাকান্ড, ২১ আগস্ট, ২০০৪ গ্রেনেড হামলা, শেখ রেহানার বাড়িটিকে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে পরিণত করা, যা তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে পেয়েছিলেন এবং তা বিএনপি সরকারের লংঘনের ঘটনা উল্লেখ করেন। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেবার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।"
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩-১৪ সালে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ বহু ধরনের যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জনগণকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে সারাদেশে তান্ডব চালিয়েছিল। তথাকথিত আন্দোলনের নামে।
তিনি বলেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নারীসহ অনেক লোক গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছিলো এবং তারা তাদের আঘাত নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সন্ত্রাসবাদে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পত্তি নষ্ট করা তাদের আন্দোলন। এর আগে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করে। উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের অনেকেই তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, তার সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সমস্ত সংস্কার করেছে।