এইমাত্র
  • জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি’র সাবেক এমপি
  • ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
  • যারা নির্বাচন চায় না, তারাই হাদির ওপর হামলা করেছে: সালাউদ্দিন আহমেদ
  • ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করিয়ে আমরা ঘরে ফিরবো’
  • রাজধানীতে ১২ তলা ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১৪ ইউনিট
  • হাদিকে দেখতে হাসপাতালে তিন উপদেষ্টা
  • হাদিকে গুলি করা সন্ত্রাসীরা শনাক্ত, যেকোনো সময় গ্রেপ্তার: ডিএমপি কমিশনার
  • হাদির ওপর হামলা: রাতেই সারা দেশে ‘অলআউট’ অভিযান
  • এই হামলা বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত : প্রধান উপদেষ্টা
  • ওসমান হাদির অর্গান কাজ করছে: তাসনিম জারা
  • আজ শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    'হামার এতি খুবই ঠান্ডা, একটা কম্বল পাইলে খুব ভালো হয় বাহে'

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২১ পিএম
    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২১ পিএম

    'হামার এতি খুবই ঠান্ডা, একটা কম্বল পাইলে খুব ভালো হয় বাহে'

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২১ পিএম

    পাঁচদিন থাকি রইদ (রোদ) নাই। ঠান্ডার মধ্যে কামাইয়ো করবার পাই না। ঠান্ডায় দুদিন কাজে যায়নি। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। হামরা নদী এলাকার মানুষ। হামার কাইয়ো খোঁজও নেয় না। শুনি অনেক জায়গায় কম্বল আসে, হামার এতি কাইয়ো কম্বল-টম্বল ধরিও আইসে না। এই ঠান্ডাত কম্বল পাইলে খুব ভালো হয় বাহে।

    দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলমান তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় এভাবেই নিজেদের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে ধরলা নদী অববাহিকার চরগোরকমন্ডল গ্রামের দিন মজুর ফজর আলী (৭৬)। একই কথা জানান একই গ্রামের আমজাদ হোসেন (৯৫)।

    সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে ফজর আলী ও আমজাদ আলীর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ধরলা নদী ও ভারত সীমান্তঘেষা তীরবর্তী এই গ্রামটিতে শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। আমজাদ আলী টানা পাঁচদিন পর সূর্যের দেখা পেয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় ধরলা পাড়ে শেষ মুহুর্তের সূর্যের আলোয় উষ্ণতা নিচ্ছেন। টানা পাঁচদিন পর সূর্যের দেখা পেলে তার মতো অনেকেই রোদে উষ্ণতা অনুভূতি নিচ্ছেন। তবে সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল বাতাস বইছে। তাই ঠান্ডায় কাবু মানুষগুলো আগুনের পরশ ছেড়ে উঠছেন না। ফলে অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন। ফজর আলী ও আমজাদ আলীর গ্রামের চারটি আবাসনে ১৫০টি পরিবার ঠান্ডায় কাঁপছে। তারাও এই চলামান তীব্র ঠান্ডা কম্বল পায়নি। তারাও তীব্র ঠান্ডায় পরিবার-পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন। একই অবস্থা গোরকমন্ডল আবাসনেও। শুধু নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের

    গোরকমন্ডল ও চর-গোরকমন্ডলে নয়, গত কয়েকদিন ধরে গোটা উপজেলাজুড়ে শীতের প্রকোপ বাড়ায় নিদারুন কষ্টে দিনানিপাত করছেন এ অঞ্চলের হাজারও নিম্ন আয়ের মানুষজন। মানুষের পাশাপাশি কষ্ট বেড়েছে গবাদিপশুরও। গত ৬ দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় এবং ৭-৮ কিলোমিটার বেগে হিমেল হাওয়ার প্রবাহ অব্যাহত থাকায় কষ্টের মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে।


    চরগোরকমন্ডল গ্রামের জেলেকা বেগমসহ একাধিক ব্যক্তি দাবি করেছেন, নদী তীরবর্তী প্রান্তিক এলাকা হওয়ায় তাদের কাছে এসব কম্বল পৌঁছায় না। কেউ তাদের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে এলাকায় যান না। ফলে তারা এই হাড়কাঁপা ঠান্ডাতেও কষ্ট করে জীবন যাপন করছেন। তাদের শীতবস্ত্র প্রয়োজন। পাওয়া গেলে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

    গোরকমন্ডল আবাসনের বাসিন্দা দিনমজুর জামিলা বেগম ও রশিদা বেগম জানান, আমাদের এইদিকে খুব শীত। সেই রকম ঠান্ডা বাহে। গরম কাপড়চোপর নাই। ঠান্ডার জন্যে কাজ কামাই কিছু করবার পারতেছি না। আমরা খুব কষ্টে আছি। কাপড়চোপর পাওয়া গেইলে কিছু ঠান্ডা নিবারণ করা গেইলো হয় বাহে। কিন্তু আমাদের এইদিকে কেউ কম্বল নিয়া আইসে না। এই দুই নারী আরও জানান, একদিন আগে মাত্র ৮টি কম্বল আবাসনের বয়স্কদের দিয়েছে। জানি না আমাদের ভাগ্যে কম্বল জুটবে কি না।

    চারটি আবাসনসহ ধরলার তীরবর্তী মানুষজন কম্বল না পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে চর-গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, চরাঞ্চলে অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। সেখানে সরকারিভাবে কম্বল পেয়েছি ২০টি ও বে-সরকারিভাবে পেয়েছি ৫০টি। একেবারে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, কমপক্ষে আরও ৩০০টি কম্বল হলে আমার এলাকায় চাহিদা মেটানো সম্ভব।

    গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শ্যামল চন্দ্র মন্ডল জানান, গোরমন্ডল আবাসনসহ এলাকায় অনেক গরীব মানুষ তীব্র ঠান্ডায় কাঁপছে। সরকারিভাবে মাত্র ৫টি কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। মাত্র পাঁচটি কম্বল দিয়ে কি এতো মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব, বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি তার এলাকার অসহায় শীর্তাত মানুষদের কম্বল দেওয়ার জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

    রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, উপজেলাসহ জেলাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গড়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী থেকে ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে। ১৭ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির পর ঠান্ডার মাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তখন আকাশে থাকা মেঘও কেটে গিয়ে রোদের দেখা মিলবে।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…