স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার প্রয়াত শিব নারায়ণ দাশ, মৃত্যুর পরও চোখের আলো নেভেনি তাঁর। সেই চোখের আলোতেই পৃথিবী দেখবেন রংপুরের ২১ বছর বয়সী মশিউর রহমান এবং চাঁদপুরের ৩৫ বছরের আবুল কালাম।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকার দুটি হাসপাতালে আলাদা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই দুজনের চোখে বসেছে শিব নারায়ণ দাশের কর্নিয়া। চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে দৃষ্টি ফিরে পাবেন তারা।
নিজের দেহও দান করে গিয়েছেন জাতীয় পতাকার এই নকশাকার। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে তার দেহ।
মশিউর রহমানের চোখের অস্ত্রোপচার ও আবুল কালামের অস্ত্রোপচার হয়েছে সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, শিব নারায়ণ দাসের ছেলে অর্নব আদিত্য দাস। তিনি বলেন, আমার বাবার ইচ্ছানুযায়ী তাঁর চোখ দান করেছি। মারা গিয়েও তিনি জীবিত থাকবেন মানুষের মাঝে। তার চোখ দিয়ে আলো ফিরবে নতুন দুটি জীবনে। আমার বাবা সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছেন। যখন থেকে বুঝেছি দেহদান কাকে বলে, তখন থেকেই জানি বাবা দেহদান করতে চান।
এই বিষয়ে, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর সাইফুল ইসলাম বলেন, বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী শিব নারায়ণ দাশের ছেলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সে অনুযায়ী সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকের একটি টিম শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় কর্নিয়া দুটি সংগ্রহ করে।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শিব নারায়ণ দাশ অবদান রেখেছিলেন, মৃত্যুর পরেও তিনি দুজন অন্ধ মানুষকে পৃথিবীর সুন্দর রং রূপ দেখার সুযোগ করে দিয়ে গেলেন।
তরুণ মশিউর রহমানের জন্মগতভাবেই দৃষ্টিশক্তি খুবই কম ছিল বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস। তিনি বলেন, “অপারেশন ভালো হয়েছে। তার চোখে আলো ফুটতে কমপক্ষে চার থেকে ৬ সপ্তাহ লাগবে। এখন যদি সে তার স্বাভাবিক কাজটুকু করতে পারে তাতেই আমরা খুশি।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস ৭৮ বছর বয়সে শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান।
পরে, শনিবার তাঁর জন্মস্থান কুমিল্লায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁকে শেষ বিদায় জানানো হয়।
পিএম