সব বাবা-মা চান সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আপনার সন্তান আপনারই দর্পণ। আপনি তাকে যে ভাবে গড়ে তুলবেন সে সেভাবেই বেড়ে উঠবে।
তাই ছোটবেলায় যদি কোন শিশু যথাযথ শিক্ষা পায়, তবে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার পথ বেশ সহজ হয়, ভালো মন্দের বিচার করতে পারার মতো যোগ্যতাও তৈরি হয় তখন তার ভিতর। এই জন্য ভালো মানুষ হিসাবে সন্তানকে বড় করতে চাইলে শৈশবেই কিছু কিছু গুণ রপ্ত করাতে হবে আপনার সন্তানকে।
আসুন জেনে নিই, সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই যেসব ভালো অভ্যাস বা গুণ শেখাবেন।
সহযোগিতা
সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মতো গুণ ছোটবেলা থেকেই তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। এগুলি এমন অপরিহার্য মানবিক বৈশিষ্ট্য যা সমাজকে সম্প্রীতির দিকে চালিত করে। সহযোগিতা ও সহমর্মিতা ছাড়া কোনও মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে বাঁচতে পারে না।
ভাগ করে নিতে শেখা
মানুষ সামাজিক জীব। সন্তানকে শেখান, সমাজের এক জন সদস্য হিসাবে যে যে জিনিসগুলি সকলের প্রাপ্য, তা বন্ধুদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া উচিত। এতে শিশুমনে দ্বেষ ও লোভ জন্ম নিতে পারে না।
শুনতে শেখা
শিশুকে শেখান যে কথা বলা এবং মতামত প্রকাশ করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই অন্যরা যা বলছে তা শোনাও গুরুত্বপূর্ণ। ছোট থেকে অন্যের মতামত ও ভাবনার স্বাধীনতাকে সম্মান করতে শেখা, ভাল মানুষ হয়ে ওঠার জন্য খুবই জরুরি।
সামাজিকতা
শিশুদের শেখানো দরকার কী ভাবে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়। অন্যের কথার মাঝে বাধা না দেওয়া এবং অন্যের মতামতকে সম্মান করতে শেখাতে হবে ছোট থেকেই।
অর্থ ব্যবস্থাপনা
বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ নন। যা নানা অসুবিধার কারণ হতে পারে। আপনার সন্তানকে তাই ছোটবেলা থেকেই অর্থ সম্পর্কে শেখানোর চেষ্টা করুন। সন্তানের জন্য অঢেল সম্পদ না রেখে বরং তাকে অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখানো বেশি জরুরি। কীভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে হয়, কীভাবে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হয় তা তাকে শেখান। সঠিক খাতে খরচ করা একটি বড় গুণ। এটি শিশুকে শেখাতে হবে।
একে অপরকে অনুপ্রাণিত করা
অনুপ্রেরণা শুধু নিজের নয়, অন্যদের জন্যেও জরুরি, এই কথা শিশুদের ছোট থেকেই শেখানো জরুরি। ছোট থেকেই এই শিক্ষা পেলে কঠিন সময়ে ভেঙে পড়বে না সন্তান।
ঘর গোছানো
ঘর গোছানো কেবল নারীর কাজ নয়। তাই আপনার সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, তাকে ঘর গোছানো শেখান। শিশুর কাছ থেকে নিখুঁতভাবে গোছানো আশা করবেন না। তবে তার ছোট্ট হাতেই যতটুকু সম্ভব গুছিয়ে রাখতে শেখান। কীভাবে বিছানা তৈরি করতে হয়, ময়লা কোথায় ফেলতে হয়, রান্নাঘর কীভাবে পরিষ্কার করতে হয় তা শেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো তার পুরো জীবনের জন্যই জরুরি।
অন্যদের নিয়ে মজা না করা
সবাই নিজের মতো করে সুন্দর। অনেক সময় ছোটরা না বোঝেই সহপাঠীর কোনো দুর্বলতার জায়গায় আঘাত করে ফেলে। তাই সন্তানকে শেখাতে হবে, যে যখন যাই বলুক না কেন, কারও সম্পর্কে কখনো কোনো অবমাননাকর মন্তব্য করা উচিত নয়।
ফরম পূরণ
এটি এমন একটি জিনিস যা আপনার সন্তানের সারাজীবন করতে থাকবে। আপনার তত্ত্বাবধান ছাড়াই তাকে সঠিকভাবে ফর্ম পূরণ করতে শেখান। তার কাছে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিন, এটি তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য প্রস্তুত করার একটি উপায়। এই অভ্যাস সন্তানকে কেবল স্বাধীনই করে না বরং তার আত্মবিশ্বাসের স্তরকেও বাড়িয়ে তোলে।
নিজের যত্ন নেওয়া
শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই নিজের যত্ন নিতে পারে না। এক্ষেত্রে তাকে আপনাদের সাহায্য করতে হবে। যখন কিছুটা বড় হবে তখন নিজে নিজে গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করা, হাত ধোওয়া, জুতা পরা, পোশাক পরিবর্তন করার মতো অভ্যাস করাবেন। সেইসঙ্গে তাকে এর প্রয়োজনীয়তাও বুঝিয়ে বলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।
পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে শেখান
কোনও ঘটনার অভিমুখ বুঝে কথা শেখান। তার নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তের ফলাফল কী হতে পারে, আগে থেকে তার আন্দাজ করে নিয়েই কাজে নামতে শেখান। শুধু পড়াশোনায় ভাল ফল করলেই যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তেমনটা কিন্তু নয়। বরং যে পরিবেশে সে বেড়ে উঠছে, সেখান থেকে উদাহরণ নিয়ে শিখতে পারলে তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পূর্ণ হয়ে উঠবে।
এবি