দোতলা ঘরে শুয়ে থাকবেন এমন স্বপ্ন কারইবা না থাকে। তবে এমন স্বপ্ন পূরণ করতে হলে চাই অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। চেষ্টা এবং ইচ্ছা থাকলে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকলেও যে দোতলা ঘরের মালিক হওয়া যায় তা প্রমাণ করেছেন এক ভিক্ষক। জমি নেই, জায়গা নেই, ঘর নেই, ভিক্ষা করে চলে সংসার। স্বপ্ন ছিল দোতালা ঘরে থাকার। এমন স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিয়েছে সর্বহারা ভিক্ষুক চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি গ্রামের রহমত আলী ওরফে নমে পাগল।
কুড়িয়ে আনা ইট, সারা দিন মানুষের কাছে হাত পেতে আনা টাকা জমিয়ে কেনা সিমেন্ট, সন্ধ্যায় তা মিশিয়ে নিজ হাতে গড়ার কাজ। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে একটু একটু করে শ্রম দিয়ে সওজের (সড়ক ও জনপথ) জায়গায় গড়ে তুলেছেন দোঁতালা ঘর। এরই মধ্যে স্ত্রী মারা গিয়েছেন। এক ছেলে বড় হয়ে দিনমজুরি করে আলাদা সংসার পেতেছে।
কিন্তু এসবে দমে যাননি ভিক্ষুক রহমত ওরফে নমে পাগল। নমে জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর মহাসড়কের দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি ইউনিয়ন পরিষদ ও পশুহাটের অদূরে সড়ক বিভাগের জমির ওপর একটি ঝুপড়িঘরে বাস করতেন। ঝড়-বৃষ্টিতে বিভিন্ন সময় সমস্যায় পড়তে হতো। এমন অবস্থায় ২০০০ সাল থেকে কুড়িয়ে আনা ভাঙ্গা চোরা ইট দিয়ে সেখানে নিজের হাতে তৈরী করতে থাকেন থাকার মতো ছোট একটি পাকাঘর। তখন থেকে তাঁর পরিকল্পনা, ওই ঘরের ওপরে আরো একটি ঘর বানানোর। সেই সময় থেকে সারা দিনের ভিক্ষাবৃত্তির অর্থ দিয়ে কিছু কিছু ইট, সিমেন্ট ও বালু কিনতেন। আর প্রতিদিন বিকেলে একটু একটু করে গাঁথুনির কাজ করতেন। দীর্ঘ ২০ বছর পর এখন নিচতলায় দুটি কক্ষ ও ওপরে এক কক্ষের ঘর তৈরি হয়েছে। নিচে দুটি ঘরের একটিতে থাকেন তিনি। থাকার ঘরের মেঝে ও দেয়ালে টাইলস বসানো, পরিপাটি। পাশের ঘরে ও ওপরের ঘরগুলো মুরগি পুষছে। সাজিয়েছে পরিপাটি ব্যাচেলার সংসার।
হাউলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাউলি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন বলেন, দোতলা ঘরে বসবাস করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিভিন্ন সময় সড়ক বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার সময় ঐ স্থানে এসে অভিযান থেমে যায়। অভিযানের এসময় তিনি ঘরের দোঁতালার ওপরে উঠে বসে থাকতেন। তাঁকে কোন ভাবেই নামানো যেত না। তখন সকলের অনুরোধে ভিক্ষুকের ঐ মহল উচ্ছেদ থেকে রক্ষা পায়। এমনই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ভিক্ষ রহমত আলী ওরফে নমে পাগলের দোতালা রাজমহল।