কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টির প্রভাবে পাহাড়ি ঢল ও নদ,নদীর জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে উক্ত উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম,পাড়া,মহল্লা গুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা মুঠোফোন সময়ের কন্ঠস্বরকে জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টির প্রভাব অব্যাহত থাকলে উক্ত উপজেলার অন্তর্গত নাফনদ সংলগ্ন নিচু এলাকা গুলো তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, গতকাল রাত থেকে লাগাতার ভারি বর্ষণে টেকনাফ উপজেলা অন্তর্গত হ্নীলা,হোয়াইক্যং, সাবরাং ইউপির ও পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বসবাসকারী প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে বসতবাড়ি, রাস্তা,ঘাট,ফসলি জমি গুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা থেকে ভারি বর্ষণের মাত্রা তীব্র আকারে বাড়তে থাকে। এই প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া, হারাংগ্যা ঘোনা, মৌলভী পাড়া, ঝিমংখালী, নয়াবাজার, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার,ওয়াব্রাং. চৌধুরী পাড়া, সিকদার পাড়া, ফুলের ডেইল, রংগীখালী, লামার পাড়া, লেদা, নাটমোরা পাড়া, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতূন পল্লান পাড়া, ড়েইল পাড়া, নাজির পাড়া, টেকনাফ পৌর এলাকার কলেজ পাড়া, জালিয়া পাড়া, ইসলামাবাদ, নাইটংপাড়া ও সাবরাং ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের মগপাড়াসহ উক্ত ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল এলাকার বাসিন্দারা এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সমস্ত এলাকার বাড়ি ঘর,গ্রামীণ সড়ক গুলো এখন পানির নিচে ধাবিত হচ্ছে।
এদিকে টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের মেম্বার হুমায়ূন সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, গতকাল রাত থেকে লাগাতার ভারি বর্ষণের প্রভাবে তাদের ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ টাকার ফসলি জমি গুলো এখন পানির নিচে। গ্রামীণ সড়ক গুলোর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানির ঢল।
বুধবার (১৯ জুন) দুপুরের দিকে এবিষয়ে জানার জন্য স্ব-স্ব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মুঠোফোন কথা বলে জানা যায় গতকাল রাত থেকে অতিবৃষ্টির প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। যা এখনও চলমান। ভারি বর্ষণের ফলে অত্র উপজেলায় হাজার হাজার বাড়ি-ঘর এখন পানির নিচে বন্দি হয়ে আছে।
বৃষ্টি না কমলে পানিবন্ধি পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে।
হ্নীলা ইউনিয়নের ওয়াব্রাং এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, নাফনদীর সংলগ্ন বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট গুলো বন্ধ থাকার কারণে পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে ওয়াব্রাং এলাকাসহ পাশ্ববর্তী পাড়া মহল্লা গুলো পানিবন্দী হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধে থাকা স্লুইস গেইট গুলো খুলে না দিলে এলাকাটি পানির নিচে তলিয়ে প্রাণ হানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট গুলো উন্নয়নে পুর্ণ নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে। উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হলে উক্ত সমস্যা গুলো সমাধান হয়ে যাবে। স্লুইস গেটের পাশে বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি কমে আসলে ক্ষনিকের জন্য আটকা পড়া পানি গুলো নাফ নদীতে চলে যাবে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আদনান চৌধুরী সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু এলাকায় ক্ষনিকের জন্য পানিবন্দি হয়েছে। ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ীধস থেকে রক্ষা করার জন্য উক্ত এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনতে মাইকিং করা হয়েছে।
আর যে সমস্ত ব্যক্তিরা পানি চলাচলের রাস্তায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে। সে স্থাপনা গুলো উচ্ছেদ করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
পিএম