এইমাত্র
  • মেসিকে দেখতে না পেয়ে স্টেডিয়ামে সমর্থকদের ভাঙচুর
  • জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি’র সাবেক এমপি
  • ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
  • যারা নির্বাচন চায় না, তারাই হাদির ওপর হামলা করেছে: সালাউদ্দিন আহমেদ
  • ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করিয়ে আমরা ঘরে ফিরবো’
  • রাজধানীতে ১২ তলা ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১৪ ইউনিট
  • হাদিকে দেখতে হাসপাতালে তিন উপদেষ্টা
  • হাদিকে গুলি করা সন্ত্রাসীরা শনাক্ত, যেকোনো সময় গ্রেপ্তার: ডিএমপি কমিশনার
  • হাদির ওপর হামলা: রাতেই সারা দেশে ‘অলআউট’ অভিযান
  • এই হামলা বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত : প্রধান উপদেষ্টা
  • আজ শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    হোটেল জাবিরে আগুন: হাসপাতালের মর্গে ২১ লাশ

    বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৯ এএম
    বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৯ এএম

    হোটেল জাবিরে আগুন: হাসপাতালের মর্গে ২১ লাশ

    বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৯ এএম

    চলমান কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় বিজয় উৎসব। এই সময় এক শ্রেণীর মানুষ সারা দেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাসায় অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন।

    এই ঘটনার পরপরই যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে ৬ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

    সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় হোটেলের ভেতরে অনেকেই আটকা পড়েন।

    পরে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল ১৪তলা বিশিষ্ট হোটেলের ছাদ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে। আরও কয়েকজনকে ১৪তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারের জন্য নিশানা উড়াতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

    এদিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পরে থাকতে দেখা যায় লাশের মিছিল। সোমবার রাত ১১ টা ৯মিনিটে দায়িত্বরত ডোম অরুন মর্গে থাকা ২১ মৃতদেহ থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেকর্ড খাতায় নারী ৮টি মৃতদেহ রেকর্ড করা হয়েছে। তারা পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালের আগুনে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

    হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএরমও) জানিয়েছেন, অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালেভর্তি হয়েছেন। হতাহত মানুষের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।


    এদিকে, রাত পৌনে ১২ টা পর্যন্ত নিহতদের ৭ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন, যশোর শহরের নাজির শংকরপুর এলাকার মোফাজ্জেল হোসেন সরদারের ছেলে ওসমান গনি (৭০), নতুন উপশহর এলাকার সোহান হোসেনের স্ত্রী জনি বেগম (২২), শাখারি গাতি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সিফাত হোসেন (২৩), ঘুরুলিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সোহানুর রহমান সোহানের ছেলে (৩০), বারান্দীপাড়া মোল্যাপাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে হাফিজ উদ্দিন (৩৫), বালিয়ার ভেকুটিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রোকন রাকিব (২০) নতুন উপশহর ডি ব্লকের বাসিন্দা পুলিশের এস আই সৈয়দ শাহিন সরদারের ছেলে সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ পিয়াস (২৫)।


    স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে যশোর শহরের চিত্রা মোড়ের পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে আন্দোলনকারীরা আগুন দেয়। হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল ১৪ তলার হোটেলের ছাদ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে। আরো কয়েকজনকে ১৪ তলারবারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারের আকুতি জানাতে থাকে। উদ্ধারকারীরা হতাহতদের একে একে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়।

    ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ভিতরে আটকে থাকা অনেকেই বাঁচারআকুতি জানিয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের সাথে স্থানীয়রাও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশনেন। আগুনে হোটেলের নিচতলা থেকে ১২, ১৩ ও১৪ তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাত ১১ টা পর্যন্ত হোটেলের কক্ষ বিভিন্ন কক্ষ থেকে ধোঁয়াবের হচ্ছিলো।

    পুলিশের এস আই সৈয়দ শাহীন সরদার জানান, তার ছেলে মিথুন মোর্শেদ পিয়াসসহ ৩ বন্ধু হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে খাবার খেতে যান। সেখানে আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করে ঢুকে আগুন দেয়। আগুনে পুড়ে তার ছেলেসহ ৩ বন্ধু মারা গেছে। কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন এস আই শাহিন। অগ্নিকান্ডে আহত একজন জানান, হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে অনেক মানুষের মৃতদেহ তিনি দেখেছেন। নির্মমমৃত্যুর দৃশ্য কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না।


    একটি সূত্র জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অনেকে হোটেলের বোর্ডার ও ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে থাকা লোকজন। ঘটনার সময় বোর্ডাররা কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন বিশ্রামে। দরজা ভেঙে উদ্ধারকারীরা দেখতে পান অনেকেই ঘুমন্ত আগুনে পুড়ে বিছানায় মারা গেছেন। রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ভয়াবহ আগুনে প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনদের আহজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। কেউ স্বজনদের ফোন ধরে গুমরে গুমরে কাঁদছিলেন। হাসপাতাল ওমর্গের আশেপাশে শ’ শ’ মানুষ ছুটে আসেন। কাঁন্না ও আহজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টিহয়। এদিকে অনেকেই স্বজনদের খোঁজ করছিলেন। কেউ আবার নিহত স্বজনের লাশ গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ব্যস্তছিলেন। তবে আগুনে মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা রাত ১২ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


    যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্ত্তীজানান, নিহতদের কেউ আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আবার কেউ আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি আরও জানান, আগুনে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।তার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরমধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়।


    এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান সংবাদ সম্মেলন করে আগুনে পুড়ে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এসময় তিনি বলেন বিজয় মিছিল নিয়ে আমরা চিত্রা মোড় অতিক্রম করার সময় কিছু দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে আগুন দেয়। অগ্নিকান্ডের সাথে কোন ছাত্র জড়িত নন। নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান রাশেদ খান।

    এবি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…