এইমাত্র
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • যেকোনো মূল্যে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে: তারেক রহমান
  • ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক: মেডিকেল বোর্ড
  • হাদির ওপর হামলা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: ইসি মাছউদ
  • সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদান ও জামানতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসির পরিপত্র
  • প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা
  • মেসির নিকট ক্ষমা চাইলেন মমতা ব্যানার্জি
  • আজ শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
    লাইফস্টাইল

    বাচ্চাদের শৈশব চুরি করবেন না, ওদের মত বড় হতে দিন

    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম

    বাচ্চাদের শৈশব চুরি করবেন না, ওদের মত বড় হতে দিন

    লাইফস্টাইল ডেস্ক প্রকাশ: ৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম

    বলা হয় যে, “দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষাকাল”। জন্মের পর থেকে মানবশিশুর শিক্ষা শুরু হয় আর চলতে থাকে আমৃত্যু পর্যন্ত। এই শিক্ষণের ও জীবনের বিভিন্ন ধাপে মানুষ বিভিন্ন আচরন করে থাকে। ছোট্ট শিশুর আচরণ আর পরিণত বয়সীর আচরণ এক হবে না তা বলাইবাহুল্য। তবুও ইদানিং খুব কষ্টের সাথে লক্ষ্য করছি যে আমরা আমাদের বাচ্চাদের সুন্দর-ভাবলেশহীন শৈশবটাকে নিজ হাতে জব্দ করে গলা টিপে মেরে ফেলছি। সেইটা কখনও গতানুগতিক শিক্ষাক্রমের যাঁতাকলের নীচে ফেলে আবার কখনও বা নিজের আচরণের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে। যাহোক, অভিভাবক হিসেবে আমাদের আচরণের কয়েকটি অসঙ্গতি ও তা নিরসনকল্পে বিভিন্ন পরামর্শ আলোচনা করছি -

    ১। অপরিণত বয়সে অযাচিত স্কুলিং বন্ধ করুনঃ আমাদের অনেক অভিভাবকগণ তাদের শিশু বাচ্চার বয়স ৩-৪ বছর হতে না হতেই স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেকে বিশাল সচেতন অভিভাবক হিসেবে জাহির করেন। আর সদ্য বাড়ন্ত শিশুটাকে পাহাড়সম বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। কারন আমাদের দেশে নার্সারি বা কেজি ক্লাসে যা পড়ানো হয় বা যে নিয়ম মানা হয় তা একেবারেই Garbage বা আবর্জনা বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। দুই হরফ 'অ', 'আ' পড়ানোর নাম করে টাকা কামানো আর বাচ্চার বাবা- মায়ের উপরে হোম টাস্ক, টিউটোরিয়াল, ক্লাশ টেস্ট হেন তেন প্রেশার দেওয়ায় যেন মূখ্য। আর আমরাও গবেট, গোবেচারা সেজে সেইটাই অনুসরণ করি। বাচ্চাদের উপরে জুলুম চাপিয়ে দিই। যে বয়সটাতে বাচ্চাটার হেসে-খেলে বেড়ানোর কথা, বাড়ির মানুষজন ও আত্মীয় স্বজনের সংস্পর্শে থেকে তার ব্রেইনের নিউরন কানেক্টিভিটি বাড়ানোর কথা, সে বয়সে আমরা তার হাতে পুঁথি ধরিয়ে তার স্বাধীন মস্তিষ্ক বিকাশের সকল প্রক্রিয়া স্তব্ধ করে দিচ্ছি।

    এছাড়া বাচ্চা যেহেতু স্কুলে যাচ্ছেই, তাই সফলতা নামক সেই ইঁদূর দৌড়ে তাকে সাথে বাবা-মাকে নিয়ে অবশ্যই। ক্লাশে আগে বলতে পারতে হবে। লিখা শেষ করতে হবে। হোম টাস্ক রেডি করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তা করার জন্য বাচ্চার অভিভাবকও সেই শিশুর উপরে এমন সব বাক্যবাণ ও কড়াকড়ি প্রয়োগ করে যাতে মনেই হয়না তার সামনে যে ছোট্ট শিশুটি বসে মলিন মুখে তার দিকে তাকানো, সে নিতান্তই অসহায় বোধ করছে। ভয় পাচ্ছে। তার এত পুঁথি পাঠের সত্যিই এখন প্রয়োজন নেই, তার প্রয়োজন বাবা-মায়ের মন খোলা আশ্বাস, ভালোবাসা, নির্ভরতা আর তার উপরে অগাধ বিশ্বাসটুকু। যে বিশ্বাসের জোরে সে এগিয়ে যেতে পারবে সামনে।

    অপরিনত বয়সে স্কুলিং এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে উন্নত বিশ্বে গবেষণা চলমান এবং সেখানে ছোট বাচ্চাদের স্কুলের পাঠদান ও পঠনে পুঁথি মুখস্থের মত বিষয় একপ্রকার অনুপস্থিত। গবেষণায় প্রাপ্ত বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিকগুলো হল -

    বাচ্চাদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি (Pianta, R. C., & La Paro, K. M. (2003).

    শারীরিক বিকাশে বাধা (Zigler, E. F., & Bishop-Josef, S. J. (2006).

    সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশ সমস্যাগ্রস্ত (Barnett, W. S. (2008).

    সৃজনশীলতা হ্রাস (Ginsburg, K. R. (2007).

    আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা হ্রাস (Katz, L. G. (1999).

    ২। বাচ্চাদের অপমানজনক ও নেতিবাচক কথা বলা থেকে বিরত থাকুনঃ আমি অভিভাবকদের কাউকে কাউকে কখনও প্রশ্ন করেছি যে, আপনার এই ছোট্ট শিশুটাকে আপনি যে এত অপমানের স্বরে কথা বলছেন, এত রাগান্বিত হচ্ছেন তার নিস্পাপ দুষ্টুমিগুলোতে। ভেবে বলেন তো- ও যদি সব পড়াগুলো না পারে, দেশ, রাজধানী, মূদ্রার নাম না ও জানে কিংবা ২০ টা ফল আর ২৫ টা ফুলের নামের সাথে ১০ টা রঙ না চিনে বা বানান করতে না পারে, তাতে এই ছোট্ট বয়সে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে? তেমন কোন সদূত্তর কখনোই পাইনি। বলে যে- ক্লাশে পড়াচ্ছে, অমুক পারছে। আমি বলি যে, আপনার বাচ্চাকে আপনি কখনোই অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করবেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রতিটা মানুষকে নিজস্ব স্বকীয়তা দিয়ে পাঠিয়েছেন। যে যার বৈশিষ্ট্যে অনন্য। তাই দয়া করে খোঁচা দেওয়া বা ছোট করার জন্য অন্যের বাচ্চার কথা মুখেও আনবেন না। আজ আপনি তার মনটা ছোট করে দিয়ে যে হীনমন্যতার বীজ বপণ করে দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে সে নিজেও আর অন্যদের তুলনায় নিজেকে শ্রেয়তর ভাববার বিশ্বাসটুকু পুরোটাই হারিয়ে ফেলবে। নিজ হাতেই তাদের এই সর্বনাশটুকু করবেন না। হ্যাঁ, কখনও কখনও উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলতে পারেন। অবশ্যই আপনার সন্তানের জন্য আপনার বিশ্বাস, ভালোবাসা আর আদর কন্ঠে উপস্থিত রেখে।

    অপমানজনক এবং নেতিবাচক কথা শুনে শিশুদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মানবোধ হ্রাস পায়। তারা নিজেদের মূল্যহীন মনে করতে শুরু করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। (Baumeister, R. F., et al. (2003).

    নেতিবাচক কথা শুনে শিশুরা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে এবং রাগ, হতাশা বা ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে তাদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সমস্যা হতে পারে। (Eisenberg, N., et al. (2001).

    ৩। সবার দক্ষতা ও মেধা এককেন্দ্রিক হয় নাঃ ইদানিংকালের অভিভাবকগণ একটা জিনিস বুঝতেই চান না যে, সব শিশু সব বিষয়ে তুখোড় মেধা নিয়ে জন্মায় না। আমাদের এই ফাটাকেস্ট মার্কা শিক্ষাব্যবস্থায় সবার জন্য একই ট্রিটমেন্ট, একই স্যাম্পলিং। ঘুরেফিরে ঐ গণিতে ফাটাফাট্টি হতে হবে। ইংরেজি মুখে খই ফুটতে হবে, অন্য সব বিষয়ে পন্ডিত হতে হবে। আমরা ভুলেই গিয়েছি যে সবাই জীবনে একই রকম পেশার জন্য জন্মাইনি। হণিতে শুণ্য পাওয়া শিশুটিও হাফেজে কুরআন হয়ে আমাদের নাজমুস সাকিব, রায়হান, তাকরিমদের মত বিশ্বজয় করতে পারে। আবার ইংরেজিতে ফেইল করা আপনার বাচ্চাটি দেশ সেরা ক্রিকেটার হতে পারে। তখন ঐ ছোট্ট বয়সের বাচ্চাটির পরীক্ষার মূল্যায়ন দিয়ে আপনার কীইবা এসে যাবে? কেউ ভাষাগত দক্ষতায় ভাল হয়, কেউ বিশ্লেষণাত্মক ব্যাপারে ভাল, কেউ বা সুর ও গানে, কেউ খেলাধূলায়। তাই সবাইকে একই ছাঁচে ফেলে বিচার করবার মত মূর্খতা যেন আপনাকে পেয়ে না বসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিন্নতায় একেকজনকে একেক দায়িত্ব দিতেন, যেমন

    মুয়াজ ইবন জাবাল (রাঃ) কে ইয়েমেনের গভর্ণর করে পাঠিয়েছিলেন তাঁর প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের কারনে;

    খালিদ বিন ওয়ালিদ রা: এর সামরিক দক্ষতা সমর কৌশল বিবেচনায় বিভিন্ন যুদ্ধে উনাকে সেনাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন ও সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর তরবারী হিসেবে উপাধি দিয়েছেন;

    আমর ইবন আস রা: প্রশাসনিক দক্ষতা ও কূটনৈতিক যোগ্যতার কারনে উনাকে মিসরের গভর্ণর করা হয়েছিল ও যুদ্ধ পরিচালনায় পাঠানো হয়েছিল;

    জায়েদ বিন সাবিত রাঃ ছিলেন ভাষাগত দক্ষতা ও লেখনীতে অতুলনীয় তাই উনাকে প্রধান ওহী লেখক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং

    আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রাঃ এর আমানতদারিতার কারনে উনাকে উম্মাহর আমানতদার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

    তাই, আজ থেকেই বাচ্চাদের পুঁথি গেলানো বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় ও আদর্শিক পড়াশোনা করান, তবে হ্যাঁ; নিশ্চয়ই একটা বয়সের পরে। নিজের অপ্রাপ্তিগুলো বাচ্চাদের উপরে চাপাবেন না। আপনার কমিউনিটিতে বাচ্চাদের দিয়ে আপনার মান বাড়ানোর ভয়ংকর যুদ্ধে নামবেন না। আপনার ছোট্ট শিশুটিকে আপনার আদরে বড় হতে দিন, বাস্তবতা শেখান, আদব শেখান। ওদের শৈশবটুকু কেড়ে নিবেন না দয়া করে।

    ৪। বাচ্চাদের পরস্পরের সাথে তুলনা, হিংসাত্মক প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে পুরস্কৃত করুন, উৎসাহ দিনঃ বাচ্চাদের শেখানোর ব্যাপারে আমরা সচরাচর তার নিকততম কোন বাচ্চার সাথে প্রতিদ্বন্দী বানাতে চেষ্টা করি। সন্তানকে আরও চৌকস কিংবা আগ্রহী করে তুলবার প্রয়াসে আমরা বলি যে, "দেখো, ও কিন্তু খুব ভাল করছে, লিখতে পারছে, ক্লাশ টেস্টে ভাল মার্ক পেয়েছে, কিংবা যে সব বাচ্চারা খেতে চায়না তাদের ক্ষেত্রে বলে থাকি যে, তুমি না খেলে বাবা আদর করবেনা, আম্মু কথা বলবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।

    আবার কেউ কেউ দুই সন্তানের মাঝে তুলনা করেন। এইটি মোটেও প্যারেন্টিং এর ভাল কনসেপ্ট নয়। বরং তুলনা করার ফলে আরেকটি বাচ্চার প্রতি শিশু মনে ইর্ষা যা পরবর্তীতে হিংসায় রুপ নেয়। এরকম করার ফলে শত্রুতারও সৃষ্টি হয় বন্ধুদের মাঝে। আর নিজের সন্তানদের মাঝে এরকম উদাহরণ বা তুলনাগুলো দেওয়ার ফলে প্রচ্ছন্নভাবে আপনি তাদের পরস্পরকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন যা কখনোই কাম্য নয়। ছোটবেলা থেকেই দেখা যায় ভাই-ভাই, ভাই-বোন, বোন-বোন নিজেদের মাঝে কে বাবা মা'র কাছে ভাল থাকবে সেই চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে যায়। কিশোর বয়সে যার ফলে অনেক মিথ্যা ও লুকোচুরির আশ্রয় নেয়। সম্পর্কের অবনতি হয় অগ্রজ আর অনুজের মাঝে। তারচেয়ে ঢের ভাল সন্তানদের কোন ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার দেওয়া। আপনি বয়সমাফিক কাজ দিয়ে পুরস্কার ঘোষনা করে অনুপ্রাণিত করুন। দেখুন, অনেক বেশি কাজে দিবে। খুব ছোট ছোট নতুন উপহারেও বাচ্চারা অনেক খুশি হয়।

    ৫। বাচ্চাদের শুধু নিষেধ নয় বরং নিজে অনুসরনীয় হয়ে উঠুনঃ আমরা অনেক সময় বাচ্চাদের কোন কাজের ব্যাপারে নিষেধ করি কিন্তু তাদের সামনেই সেই একই কাজ আমরা নিজেরাই করি। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা পড়াশুনায় মনযোগী হউক, আদর্শ সন্তানের গুনাবলী তার মধ্যে বিরাজ করুক। কিন্তু এই আমরা বসে বসে টিভির স্ক্রীনে অশ্লীল মুভি ও বিজ্ঞাপন দেখতে থাকি, গান শুনি (গান-বাদ্য শোনা ইসলামী শরীয়াতে হারাম)। কিন্তু আমার সন্তান যদি টিভিতে বসে তার পছন্দের কোন সিরিয়াল দেখতে শুরু করে তখন আমরা বকা দিই, নাক সিঁটকাই। অনেকে তো একধাপ এগিয়ে বলেন যে, খারাপ গান বা মুভি দেখা যাবে না। মুভি আর গানের আবার খারাপ ভাল কি? আপনাকে যখন সে এসব অসার কাজে সময় নষ্ট করতে দেখবে, আপনার পছন্দ অনুযায়ী সিরিয়াল দেখতে দেখবে; সে ও ভেবে নিবে যে তার পছন্দমত টিভি প্রোগ্রাম, গান এগুলো দেখা তার জন্য জায়েয হয়ে যাবে। এর কুফল হয়ত একদিনে বোধগম্য হয়না কিন্তু সেই বাচ্চাটিই যখন কৈশোর পেরিয়ে টিনএজ এ পদার্পণ করে তখন রবি ঠাকুরের কথানুযায়ী এমন বালাই নিয়ন্ত্রন বড্ড কঠিন হয়ে যায়। কি একটু কঠিন মনে হচ্ছে কথাগুলো? আসুন, একটু ভেঙে বলি- আপনার আজ যে বয়স, সে অনুযায়ী আপনার কাছে ৯০ দশকের বা তার পরবর্তী কয়েক বছরের মুভি বা গান আকর্ষনীয়। তাই আপনি সেগুলো উপভোগ করেন মন দিয়ে। আপনার কাছে আপাত ভাল'র বিচারে বাংলা বা হিন্দী সিনেমার সেই সময়ের নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা মনে উঁকি দিচ্ছে। রোমান্টিসিজম বলতে হয়ত হাত ধরে পার্কে গান গাওয়া পর্যন্ত বেলাল্লাপনাকেও আপনি সায় দিচ্ছেন। কিন্তু আপনাকে এইসব কাজে লিপ্ত থাকতে দেখে আগামীতে আপনার সন্তান সময় আর যুগের সাথে হলিউডের মডেল (নাম লিখলাম না কারণ- কেউ আবার এ ব্যাপারে উৎসাহিত বোধ করতে পারে।) তারকাদের উদ্দাম নৃত্য দেখার ব্যাপারে যে অধিকতর আগ্রহী হবেনা সে ব্যাপারে আপনার ভেবে দেখা প্রয়োজন বৈকি। কারন আবেগ, রিপু এগুলোকে আপনি কিছুটা ছাড় দিয়ে আবার বেঁধে রাখতে পারবেন না। তাই ভাল হয় অপছন্দের ও নিষিদ্ধ কাজগুলো করা থেকে নিজেই সম্পূর্ণ বিরত হউন। বাড়ির বোকাবাক্সটিকে যদি সরাতে না পারেন একেবারে তাহলে তার ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন হউন।

    আবার আরেকটি বিষয় আমাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় যে, আমরা কেউ চাইনা আমাদের সন্তানেরা ধূমপায়ী হোক বা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ুক কিন্তু আমরাই এই মরনফাঁদ প্রতিনিয়ত নিজের মাঝে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চকলেট বা চিপস খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয় এইটা আমরা সবাই জানি। হয়ত খুব বেকায়দায় পড়লে দুয়েকবার না দিয়ে উপায় থাকেনা। কিন্তু অনেক সময়েই এমন হয় যে আমরা বড়রা তার সামনে একটা চকলেট, চিপস বা বিস্কুট খেতে খেতে চলে আসি। যে সময়টাতে তার ঐ খাবারটি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভাল হবে না। অথচ আমরা নিজেরাই সে কাজটা করি আর শিশুমনে প্রবোধ দিই যে, বাবু এখন তোমার খাওয়া হবেনা, এইটা তোমার খাওয়া হবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। যেখানে নিজের ন্যুন্যতম সতর্কতার ধার ধারছিনা সেখানে বাচ্চাদের এ ব্যাপারে মানিয়ে নেওয়া মোটেই সহজ নয়। বরং আপনার উচিত যে কাজ সন্তানের করা ঠিক হবেনা, যা খাওয়া ঠিক হবেনা সেগুলো তার সামনে না নিয়ে আসা।

    আবার বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোন সবার হাতে হাতে। আমরা বাচ্চাদের ফোন থেকে বিরত রাখতে চাই অথচ তার দিকে মনোনিবেশ না করে ঘন্টার পর ঘন্টা আমরাই ফেসবুকে আছি অথবা গেমস খেলছি। তাই বাচ্চারা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয় এ বিষয়ে।

    শেষকথাঃ সবশেষে বলতে চাই - কথাগুলো একটু গভীরভাবে ভাবুন। ক্লাশের সাময়িক রোল নম্বরের ক্রমানুসার আপনার শিশুর ভবিষ্যতের কোন নির্ণায়ক তো নয়ই বরং অবোধ বাচ্চাগুলোর জন্য ক্ষতিকারক। ওদেরকে ওদের মত স্পেস দিন,বড় হতে দিন, আর ওর দূর্বলতাতেও সাহস ও বিশ্বাস চাংগা রাখতে বলুন। দেখবেন আপনার শিশুই একদিন বিশ্ব জয় করে ফিরবে।

    দয়া করে ওদের শৈশবটাকে কেড়ে নিয়েন না। ওদের শৈশব ওদের দিয়ে দিন। দু'নয়ন ভরে দেখতে থাকুন ওদেরকে। আল্লাহর শুকরিয়া করুন আর প্রাণ খুলে দুয়া করুন। শৈশবটাকে শৈশব হতে দিন। দয়া করে শৈশবটাকে চুরি করবেন না।

    আসুন আমরা সচেতন হই। আমাদের সচেতনতা ছোঁয়াচে হয়ে সঞ্চারিত হোক আমাদের সন্তানদের মাঝে। ধীরে ধীরে প্রাণিত হোক আপনার আগামীর বিনিয়োগ।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…