রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণখান থানা এলাকার বিভিন্ন ওলি গলি, বাজার ও রেলগেইটের আশপাশে ছিনতাই, মোবাইল চুরি, বখাটে তরুণদের অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে এসব এলাকার রাস্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে ছিনতাইকারীরা অবাধে বিচরণ করছে, ভয় দেখিয়ে পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ছিনতাই করছে।
এলাকার সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশি কার্যক্রম দুর্বল ও জনবল কম থাকায় অপরাধীদের দমন সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে ছিনতাইকারীরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। উত্তরা পূর্ব থানার কসাই বাড়ী রেলগেইটের আশপাশ ও উত্তরখান দক্ষিণখান থানার পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীর উৎপাত বেড়েছে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) জয়নাল মার্কেট এলাকা থেকে রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তির মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, এখন এলাকার পরিস্থিতি ছিনতাইকারীর আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন পথচারীর মোবাইল, ঘড়ি ও মানিব্যাগ কেড়ে নিচ্ছে।
দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমরা ছিনতাই প্রবণ এলাকার টহল বৃদ্ধি করেছি এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধীদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি।উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মোঃ মোর্শেদ আলম বলেন, “পূর্বের ওসির সময় অপরাধ কমে যায়নি। আমরা এখন কাজ করে যাচ্ছি। মাদক ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সড়ক পরিস্থিতিও বেশ ঝামেলার। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, বিডিআর বাজারের সামনে ফুটপাত ও সড়কের অর্ধেক দখল করে হকাররা অবাধে বসে থাকছে। আজমপুর এলাকায় বেটারি চালিত অটোরিকশার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহন পার্কিং ও হকারদের ভিড় রাস্তার চলাচল ব্যাহত করছে।
এদিকে, উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টর, রেলগেইট, জয়নাল মার্কেট ও ফায়দাবাদ এলাকার বস্তিতে অজস্র ছিনতাইকারী ও অপরাধী বসবাস করছে। তারা মূলত পথচারীর মোবাইল, মানিব্যাগ, ঘড়ি ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস লক্ষ্য করে।
নানা অপরাধের মধ্যে অটোরিকশা চুরির ঘটনাও বেড়েছে। গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে, উত্তরখান মৈনারটেক এলাকায় অটোরিকশা চালক মোঃ মকছেদুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করে অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়। অন্যদিকে, গাওয়াইর এলাকায় অজ্ঞান করে চালকদের কাছ থেকে গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
উত্তরা জয়নাল মার্কেট থেকে আব্দুল্লাহপুর ও ৮ নম্বর রেলগেইট পর্যন্ত এলাকা অরক্ষিত ও দুষিত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীরা পথচারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে valuables নিয়ে যায়।
এডিসি মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অভিযান চলছে। গ্রেফতার ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হচ্ছে। আশা করি, পুলিশি কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, অপরাধীদের গ্রেফতার হলেও তারা জামিন পেয়ে আবার অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, ছিনতাইকারীরা লোহার সাবল, ধারালো অস্ত্র, চাপাতি ও রড ব্যবহার করছে।
উত্তরায় এখন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, দিন দুপুরেও গণপরিবহনের যাত্রীদের উপর হামলা হচ্ছে। পুলিশি উপস্থিতি দেখা যায় না। প্রকাশ্যে খুন, দোকান লুট, পথচারী ও যাত্রীদের উপর ধারালো অস্ত্রের হামলা, চাঁদাবাজি এসব ঘটনায় স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অতঃপর, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের আরও তৎপরতা ও সতর্কতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তারা দাবি করছেন, রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা জোরদার ও অপরাধীদের দমন করতে হবে দ্রুত।
এসআর