রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) একাডেমিক ক্যালেন্ডার থেকে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক বন্ধ ৭১ দিন।এছাড়া শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ ১০৪ দিন। জ্বালানি সাশ্রয়ের নামে বৃহস্পতিবার অঘোষিত বন্ধ ৫২ দিন। সব মিলিয়ে বন্ধ থাকে ২২৭ দিন।যা ১২ মাসের মধ্যে প্রায় আট মাসের সমান।
এছাড়াও রয়েছে সেমিস্টার ব্রেকের বন্ধ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বলে বন্ধ।সব মিলে ক্লাস করার জন্য খুব কম সময় পান শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবারের অঘোষিত ছুটির ফলে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সুবিধা, লাইব্রেরি সুবিধা, বাস সুবিধা সহ সব ধরনের প্রশাসনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনলাইন ক্লাস বলা থাকলেও অধিকাংশ বিভাগে অনলাইন ক্লাস হয় না। ফলে তারা মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়,বৃহস্পতিবার অনলাইন ক্লাস বলা থাকলেও অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা নেন। এতে শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। এই জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। অপর দিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টানা তিন দিন ছুটি উপভোগ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ এর আগস্ট মাসে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদের সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ৪১তম জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।এর দেড় বছর পার হলেও এখনো বৃহস্পতিবার সশরীরে ক্লাসে ফিরেনি বেরোবি।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম রহমান শাওন বলেন, দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বন্ধ নেই। আমাদের বৃহস্পতিবার অঘোষিত বন্ধের ফলে আমরা লাইব্রেরি, মেডিকেল ও বাস সুবিধা পাই না।মাঝে মাঝে আমাদের স্যারেরা সশরীরে ক্লাস দেন তখন বিপাকে পড়তে হয়। ক্লাস করতে আসার জন্য আলাদা গাড়ি ভাড়া গুনতে হয়। এইভাবে চলতে থাকলে মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে আমরা পিছিয়ে পড়ব।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিমুল সরদার বলেন, এইভাবে বন্ধ থাকার ফলে আমাদের কোর্স শেষ করতে দেড়ি হচ্ছে। কলা বা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ সঠিক সময়ে সেমিস্টার শেষ করতে পারলে আমরা পারি না। আমাদের ল্যাব থাকে,ফিল্ড ওয়ার্ক থাকে।বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট শূণ্যের কোটায়। কিন্তু এখন আবার সেশনজটে পড়ে যাওয়ার আশংকা করছি। এছাড়া অনলাইন ক্লাস যথার্থ নয় বলেও এই শিক্ষার্থী বলেন।
ছাত্র উপদেষ্টা সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম বলেন, এইটা ভিসি স্যারের একা সিদ্ধান্ত নায়।একাডেমিক কাউন্সিল ও যথাযথ নিয়ম মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া আমি যতদূর জানি। এখানে আমার কিছু বলার নেই।
নতুন বছরে বৃহস্পতিবার সশরীরে আসার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন,দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাববে সরাসরি আসা যায় কিনা।
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমরাও অবগত শিক্ষার্থীদের ছুটি বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বাজেট কম। জ্বালানি সাশ্রয় এর জন্য আমরা সপ্তাহে একদিন অনলাইন ক্লাসে আছি। পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলে এই বিষয়টি তোলা হবে।
এই বিষয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.হাসিবুর রশীদ বলেন, বৃহস্পতিবারের ক্লাস নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেজন্য পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল আছে। তবে আমরা আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।
এমআর