এইমাত্র
  • দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
  • স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ, স্ত্রী ও প্রেমিক আটক
  • রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্দে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চান এরদোয়ান
  • ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না বিএনপি
  • ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়
  • ওসমান হাদির ওপর হামলার পর পানছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • আজ রবিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    মুক্তমত

    ডিভোর্স দেয়ার সঠিক নিয়ম, মামলা করার পদ্ধতি ও শাস্তি কী?

    মো. মাহমুদ হাসান নাজিম প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
    মো. মাহমুদ হাসান নাজিম প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১১:৩৯ এএম

    ডিভোর্স দেয়ার সঠিক নিয়ম, মামলা করার পদ্ধতি ও শাস্তি কী?

    মো. মাহমুদ হাসান নাজিম প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১১:৩৯ এএম

    বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, সেই সাথে এটি একটি ধর্মীয় বিষয়। যদিও মুসলিম আইন বিয়েকে একটি দেওয়ানী চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে একসাথে বসবাস করা, পরিবার গঠন, সন্তান জন্মদান ও বংশবিস্তার করার বৈধ্য অধিকার লাভ করে থাকে। একটি সুস্থ বিয়ে দুটি মানুষকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নির্ভশীলতা, দায়িত্ববোধ ও ভালোভাসা তৈরি করে থাকে। তাছাড়া দুইটি পরিবারকেও আবদ্ধ করে রাখে। এই সম্পর্ক মাঝপথে ভেঙে যেতে পারে এই চিন্তা বা আশঙ্কা কারো কল্পনাতেও আসে না।

    তবে ঠুনকোসহ ছোট-বড় নানা কারণে দেশে তালাকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েদের শিক্ষা বাড়ছে, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বাড়ছে, সচেতনতা বাড়ছে ও আত্মসম্মানবোধ বাড়ছে সে জন্য মেয়েদের মধ্যে একতরফা মানিয়ে নেওয়া, স্যাক্রিফাইজ, অ্যাডজাস্ট করার মানসিকতা বর্তমানে লক্ষ্য করা য়ায় না। সংসারে খুব সামান্য ও ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আলাদা থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক বন্ধন ও ধর্মপালনের মাধ্যমে ডিভোর্সের হার কমানো সম্ভব।

    ডিভোর্স নিয়ে সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরা হলো-

    ১. সাধারণত স্বামী-স্ত্রী যে কেউ ডিভোর্স দিতে পারেন। বিয়ে নিবন্ধনের সময় ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে ডির্ভোসের অধিকার দেওয়া থাকে। তবে ডির্ভোসের অধিকার দেওয়া না থাকলে স্ত্রীকে আদালতে গিয়ে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুসারে পারিবারিক আদালতে আবেদন করে ডির্ভোস দেওয়া যায়।

    ২. পারস্পরিক সম্মত্তিতে ডির্ভোস দেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে বেশি প্রচলিত হচ্ছে খুলা। স্ত্রীকে প্রাপ্য দেনমোহর ও ভরণপোষন (স্বামী-স্ত্রী যেই তালাক প্রদান করুক আইন অনুসারে স্ত্রী তার প্রাপ্য দেনমোহর ও ভরণপোষন পাবেন) প্রদান করে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪ এর ৬ ধারা মতে ডির্ভোস বা তালাক রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী নতুন করে বিবাহ করতে হলে ইদ্দতকালীন তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর বিবাহ করতে হবে। তালাক দেওয়ার সময় যদি স্ত্রী অন্ত:সত্বা থাকেন তাহলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। যে দিন সন্তান ভূমিষ্ট হবে সেদিন তালাক কার্যকর হবে।

    ৩. স্বামী-স্ত্রী তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪ অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান, সিটিকর্পোরেশন এর মেয়র বরাবর নোটিশ প্রদান করতে হয়। স্বামী বা স্ত্রীকেও নোটিশের এক কপি পাঠাতে হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করবেন। যদি চেয়ারম্যান বা মেয়র ব্যর্থ হন বা স্বামী-স্ত্রী তাদের সিদ্ধাস্তে অটল থাকে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। তালাক কার্যকর হওয়ার পর পুনরায় সংসার করতে চাইলে আবার নিয়ম মেনে বিয়ে করতে হবে।

    ৪. হিন্দু আইনে বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাক এর বিধান নাই। দাম্পত্য জীবন চরম পর্যায়ে গেলে ভরণপোষণ এবং পৃথক বাসস্থান দাবি করে দেওয়ানী আদালতে বিবাহ-বিচ্ছেদ চেয়ে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হবে।

    ৫. খ্রিষ্ঠান ধর্মালম্বীদের বিবাহ বিচ্ছেদ একটি জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ বিষয়। ডির্ভোস অ্যাক্ট, ১৮৬৯ এর ১৭ ও ২০ ধারা অনুসারে জেলা জজ ও হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হয়।

    শাস্তি:

    বিয়েসংক্রান্ত অপরাধ দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ ধারাতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ডির্ভোস না দিয়ে পুনরায় বিয়ে করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন এবং বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবেন। ব্যতিক্রমও রয়েছে যদি স্বামী বা স্ত্রী কেউ সাত বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ বা জীবত নাই বলে মনে করা হয় তাহলে তালাক ছাড়া বিবাহ করতে পারবেন। আগের বিবাহ গোপন করে বা প্রতারণার মাধ্যমে বিবাহ করলে তা দন্ডবিধি ৪৯৫ ধারা মোতাবেক ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আবার জেনেশুনে অন্যের স্ত্রীকে বিবাহ করলে তা ৪৯৭ ধারা অনুসারে ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও বিবাহ বাতিল হবে।

    মামলা কোথায় করবেন:

    বিয়ে সংক্রান্ত যে কোন মামলা আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সহকারী জজ/পারিবারিক আদালতে করতে হয়। কারো যদি মামলা পরিচালনা করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে জেলা লিগ্যাল এইড বরাবর আবেদন করতে হয়।

    সবশেষে বলা যায়, আদর্শ পরিবার গঠন, মানুয়ের জৈবিক চাহিদাপূরণ ও মানসিক প্রশান্তি লাভের একমাত্র বিধান ও মাধ্যম হচ্ছে বিয়ে। তাই ডিভোর্স এর মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজে বার বার ঠান্ডা মাথায় পরিবারের সাথে আলোচনা করা উচিত। ডির্ভোস একটি পরিবার, সমাজ বা কারো জন্য সুখকর নয়।

    মো: মাহমুদ হাসান নাজিম ।। আইনজীবী, জজ কোর্ট ঢাকা।

    [email protected]

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…