সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর আমাদের দেশে যেন নিত্য দিনের ঘটনা। প্রতিদিনই খবরের কাগজ খুললে চোখে পরে সড়ক দুর্ঘটনায় বীভৎস সব খবর। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী নিজেদের অসাবধানতা ও সড়কের সংকেতগুলোর মানে সম্পর্কে যথাযথভাবে না জানা।
ট্রাফিক সাইন হচ্ছে রাস্তায় বিভিন্ন তথ্য, বাধ্যতামূলক ও সতর্কতামূলক চিহ্ন অপরদিকে ট্রাফিক সিগনাল হচ্ছে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল সমন্বয়ের জন্য সাংকেতিক নির্দেশনা। যেগুলোর সব কিছুর অর্থ আমরা জানি না। আমাদের আজকের আয়োজন ট্রাফিক সাইন ও সিগনাল নিয়ে।
ট্রাফিক সাইন
ট্রাফিক সাইন প্রধানত ৩ প্রকার হয়ে থাকে এগুলো হলো
বাধ্যতামূলক সাইনঃ বাধ্যতামূলক সাইন মূলত যানবাহন চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক নির্দেশনা প্রদান করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই বাধ্যতামূলক সাইন গুলো সাধারণত বৃত্তাকার ও লাল বা নীল রঙের হয়ে থাকে।

সতর্কতামূলক সাইনঃ ট্রাফিক সাইন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সতর্কতামূলক সাইন যা রাস্তায় চলার সময় পথচারীদের বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা নির্দেশ করে থাকে। এই সাইন গুলো ত্রিভুজাকৃতির এবং হলুদ রঙের হয়ে থাকে যেমন হাইওয়ে সাইন, জলপ্রপাত সাইন, স্কুল এলাকা সাইন, পার্শ্ব রাস্তা ডানে, অসমতল রাস্তা, রাস্তার কাজ চলছে, ফেরি পারাপার, বিপদজনক গর্ত, আঁকাবাঁকা রাস্তা ইত্যাদি।

তথ্যমূলক সাইনঃ ট্রাফিক সাইন গুলোর মধ্যে সর্বশেষ হলো তথ্যমূলক সাইন যা সাধারণত পথচারীদের তথ্যমূলক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এ ধরনের সাইন রাস্তায় যানবাহন চালকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে থাকে এবং এর ফলে রাস্তায় চলাচলের সময় পথচারীদের সুবিধা হয়।
ট্রাফিক সিগনাল
আর ট্রাফিক সিগনাল মূলত বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল সমন্বয় করার জন্য ড্রাইভার ও পথচারীদের দেয়া নির্দেশনা। বেশিরভাগ শহরেই লাল, নীল ও হলুদ ট্রাফিক সিগনাল লাইট এর মাধ্যমে এই নির্দেশনা মেসেজ দেয়া হয়। সড়ক পথে ট্রাফিক সিগন্যাল বা সংকেত মূলত ৩ প্রকার।
বাহুর সংকেত
ট্রাফিক সিগন্যালের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সংকেত হলো বাহুর সংকেত বা হাতের সংকেত যা ট্রাফিক পুলিশ তার হাতের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। এই ধরনের হাতের সংকেত সাধারণত অনেক আগে ব্যবহার করা হতো তবে বর্তমানে বেশিরভাগ শহরেই ইলেকট্রনিক লাইট ব্যবহার করে ট্রাফিক সিগন্যাল দেয়া হয়।
আলোর সংকেত
আলোর সংকেত যা সবুজ, হলুদ ও লাল রংয়ের ইলেকট্রনিক লাইটের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। সাধারণত রাস্তার মোড়ে পথচারী ক্রসিংয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ইলেকট্রিক লাইট স্থাপন করা হয়। এই লাইট গুলো তিন ধরনের হয়ে থাকে, লাল, হলুদ এবং সবুজ।
লাল: যানবাহন থামার বা যানবাহন চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। লাল লাইট দেখানো হলে, তাৎক্ষণিকভাবে যানবাহন থেমে যেতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে।
হলুদ: সাবধানে চলাচলের এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। এছাড়া থামার প্রস্তুতির জন্যই হলুদ সংকেত দেয়া হয়।
সবুজ: পুনরায় যানবাহন চলাচলের নির্দেশ দিয়ে থাকে।
শব্দ সংকেত
শব্দ সংকেত গুলো সাধারণত জরুরী কোন নির্দেশনার জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্রাফিক হুইসেল, এমারজেন্সি সাইরেন ইত্যাদি শব্দ সংকেতের উদাহরণ। এগুলো হলো প্রধান তিন ধরনের ট্রাফিক সিগন্যাল তবে এগুলো ছাড়াও আরো নানা ধরনের ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে যেমন দিকের সংকেত, ফ্ল্যাশিং সিগন্যাল, পিয়েস্ট্রিয়ান সিগন্যাল ইত্যাদি। এগুলি বিভিন্ন সংকেত দেয় এবং বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজন।

ট্রাফিক সাইন ও ট্রাফিক সিগন্যাল গুলো সাধারণত পথচারী এবং যানবাহন চালকদের রাস্তায় নিরাপদ ও নিশ্চিন্তের চলাচল করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং দুর্ঘটনা এড়ানার জন্য এগুলো বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সকলের সচেতনতার জন্য ট্রাফিক সাইন এবং সিগনাল সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।
এবি