পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।’
অথচ পৃথিবীর মানুষ গুলো কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে! সমাজের ভালো মানুষরা দিন দিন খোলসের ভেতর নিজেদের মুখ লুকিয়ে রাখে। কারণ সমাজের দুষ্টু মানুষের সঙ্গে পেরে ওঠা দায়। আর সেই সুযোগে সমাজকে বুক ফুলিয়ে দখল করছে তারা।
এই ধরুন, পুলিশ মারছে পুলিশকে, ভালোবাসার অপরাধে সৌরভদেরকে মরতে হচ্ছে চাচার হাতে, সন্তান কুপিয়ে মারল তার মা কে, বৃদ্ধ পিতা সন্তানের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কুপিয়ে মারল তার নেশায় আসক্ত ছেলেকে, যৌতূকের দ্বায়ে আজিজুলদের হাতে মরতে হচ্ছে সন্তানসহ স্ত্রীকে, বন্ধুর হাতে খণ্ডিত হতে হচ্ছে আনারের মত এমপিদের, প্রতারণার অভিযোগে প্রেমিকা মারছে তার প্রেমিককে। গত এক মাসের এমন অসংখ্য খবর আমাদেরকে বিস্মিত, ক্ষুব্ধ আর বেদনার্ত করছে। এর আগেও কিন্তু আমরা দেখেছি দিনের আলোয় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বিশ্বজিৎকে। বাসে আগুন দিয়ে মারা হয়েছে অজস্র প্রাণ। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবেছি! কেন মানুষ এত হিংস্র হয়ে ওঠে। কেন ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ হারিয়ে দিন দিন মানুষগুলো অমানুষ হয়ে যায়? কেন এই নিষ্ঠুরতা !
আসলে বিবেকের দংশন যেখানে তাড়া করে সেখানেই করুণার উদ্রেক হয়। কিন্তু যে অমানুষ তার আবার বিবেক থাকে নাকি! সমাজের দায়বদ্ধতা হত্যাকারীদের কখনো ভাবায় না। ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় খুনের মতো ঘটনা ঘটাতেও তাদের বিবেক নাড়া দেয় না। সমাজ যখন নষ্টদের অধিকারে চলে যায়, তখন মানুষ ভ্রষ্ট পথে হাঁটতে থাকে। নষ্টদের ভিড়ে ভালো মানুষও হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে। অথচ আমরা নিজেরা সৃষ্টির সেরা জীব পরিচয়ে গর্ববোধ করি।
তবে সবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন! আপনি এবং আপনার চারিপাশের পরিবেশ নিয়ে! আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে! সোস্যাল মিডিয়ায় নাশকতা, হিংস্রতা ও পাশবিকতার ছবি, ভিডিও ও সংবাদগুলো দেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আমরা যতটুকু লাভ করতে পারছি তার চেয়ে এই ভয়াল ছবি ও ভিডিও গুলো দেখে আমাদের মনোজগতে নেগেটিভ প্রভাব বেশি পড়ছে কিনা এটি হয়ত ভাবার বিষয় এখন আমাদের। হিংস্রতাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি নাতো? হয়ত আমাদের মধ্যে সংবেদনশীলতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। হয়ত হিংস্রতাকে দেখে কিছু মানুষের মনে হিংস্রতা বাসা বেধে বসছে। দিন দিন আমাদের মন হিংস্র হয়ে উঠছে, নাকি আমরাই হিংসার উন্মত্ততায় মেতে উঠছি!
কবি হয়তো এই জন্যই বলেছেন-
সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করনি।