এইমাত্র
  • সদরপুরে প্রার্থীদের নিজ উদ্যোগে নির্বাচনী ব্যানার অপসারণ
  • শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
  • শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা
  • শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
  • দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
  • স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ, স্ত্রী ও প্রেমিক আটক
  • রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্দে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চান এরদোয়ান
  • ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না বিএনপি
  • ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়
  • ওসমান হাদির ওপর হামলার পর পানছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
  • আজ রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থ জোগান দেওয়া মোতালেব এখনো অধরা

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ পিএম
    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ পিএম

    ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থ জোগান দেওয়া মোতালেব এখনো অধরা

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ পিএম

    চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব এখন আত্মগোপনে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, আন্দোলন দমনে অর্থ সহায়তা, অর্থপাচারসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও পুলিশ এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। পুলিশ বলছে, তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তিনি দেশেই আছেন, শুধু রাজনৈতিক প্রভাব ও বিপুল সম্পদের কারণে তাকে স্পর্শ করতে পারছে না কেউ।

    ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবদুল মোতালেবের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা হয়। বাদী উত্তর জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নাজিম উদ্দিন। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আমিন ও ১০ ডিসেম্বর ফারুকুল ইসলাম আরও দুটি মামলা করেন। মামলাতেই অভিযোগ— ২০ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া হয়। সব মামলায় সরাসরি আবদুল মোতালেবের নাম রয়েছে।

    চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাবেক সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তাধীন। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    উপজেলা চেয়ারম্যানের পর আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় আবদুল মোতালেব সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি গড়ে তোলেন বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। তিনি বনফুল এন্ড কোম্পানি এবং কিষোয়ান এন্ড কোম্পানির মালিক। খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে তাঁর কোম্পানিগুলোর অবস্থান ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজনীতির সুযোগে তিনি নানা সরকারি সুবিধা নিয়েছেন, প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে কমিশন আদায় করেছেন।

    সাতকানিয়ার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, মোতালেব সাহেব নিজে থাকতেন এলিট এলাকায়, কিন্তু সাতকানিয়ার সাধারণ মানুষ রয়ে গেছেন অবহেলায়। উন্নয়নের নামে ছিল লুটপাট।

    ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় মোতালেবের বিরুদ্ধে অর্থ ও সাংগঠনিক সহায়তার অভিযোগ ওঠে।

    ছাত্রনেতা রবিউল হাসান বলেন, আন্দোলনের সময় হামলাকারীদের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছিলেন। হামলার আগে মোতালেবের পক্ষ থেকে অর্থ বিতরণ করা হয়েছিল।

    মিছিলে হামলার সময় অস্ত্রধারীরা যেভাবে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় এবং আহতদের হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে বাধা দেওয়া হয়, তাতে স্পষ্ট হয় হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় মোতালেবের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নাম উঠে এসেছে। সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান থাকার সময় থেকেই মোতালেবের সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক সময় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। চট্টগ্রাম শহর ও সাতকানিয়ায় তার নামে-বেনামে জমি, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

    একজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে মোতালেব বড় বড় ঠিকাদারি কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। একেকটা সরকারি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

    লোকমুখে প্রচলিত, মোতালেব তার বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে ফ্ল্যাট কেনার গুঞ্জন বহুদিনের। তবে এ পর্যন্ত কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি।

    চট্টগ্রামের একজন দুদক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কয়েকবার অভিযোগ পেয়েছি। তবে রাজনৈতিক চাপের কারণে কার্যকর তদন্ত সম্ভব হয়নি। নতুন করে আবার বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

    স্থানীয়রা বলছেন, যদি নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, তাহলে মোতালেবের শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলবে। স্থানীয় প্রশাসনও মোতালেবের ব্যাপারে বরাবরই নরম ছিল। উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ফলে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলেও দ্রুত গায়েব হয়ে যেত।

    পুলিশও অনেক সময় তার নির্দেশেই কাজ করত বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়। ফলে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযান বা তদন্ত সহজ ছিল না। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাধারণ মানুষ বলছেন, তারা এখন বিচার চান।

    অনেকের অভিযোগ, গত ১৭ বছর ধরে মোতালেব ও তার সহযোগীরা এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। জমি দখল, চাঁদাবাজি, স্কুল-কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য— সবকিছুর পেছনে ছিল একটিই নাম।

    স্থানীয় ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ রাজনীতি চাইনি, শান্তি চেয়েছি। কিন্তু মোতালেব সাহেব সাতকানিয়াকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করতেন। এখন জনগণ বিচার চায়।

    শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, ছাত্র আন্দোলনে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের সবাই মোতালেবের আশীর্বাদপুষ্ট। ন্যায়বিচার না পেলে আমাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

    বর্তমানে আবদুল মোতালেবের কোনো আনুষ্ঠানিক খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ বলছে, তার অবস্থান শনাক্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। দুদক নতুন করে তার সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।

    একাধিক সূত্র বলছে, তার ব্যবসায়িক নথিপত্র ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাই করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, যদি প্রশাসন আবারও প্রভাবিত হয়, তাহলে মোতালেবের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আবদুল মোতালেবের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক করুণ প্রতিচ্ছবি। যেখানে জনপ্রতিনিধিত্বের আড়ালে গড়ে ওঠে অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য, এবং জনতার ওপর চলে নির্যাতন।

    সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাধারণ মানুষ আজ ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। তাদের আশা আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন, বিচার থেকে সে রেহাই পাবে না।

    লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোতালেবের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত চলছে। তার অবস্থান নিয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য পেলে, আমরা তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনব।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…