রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় অধিক মুনাফার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সময়ের আগেই গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে যেমন আমের স্বাদ ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । জনস্বার্থে বিষয়টি আমলে নিয়ে বেশ কিছু আম জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন ।
জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো কালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। এবছর ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশের আগেই গাছ থেকে আম নামানো শুরু করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহণ, বিপনণ ও বাজারজাত পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত সভায় রাজশাহী জেলার আম পাড়ার সময়সুচী নির্ধারণ করে দেন জেলা প্রশাসক। জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত সভায় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়।
ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাকাশিত ‘ম্যাঙ্গো ক্যান্ডোরে’- নানা জাতের গুটি আম ১৫ মে, গোপালভোগ বা রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কার্টিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে বলে রাজশাহীর ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারে’ প্রকাশ করা হয়। বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সভার আয়োজন করে আম নামানোর নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয় । ওই বছর সব ফলচাষি ও ব্যবসায়ীকে নির্দেশনা মেনে আম নামানোর কথা বলা হয়। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া বিষয়ে জানানো হয়। তবে কোনো কৃষকের গাছে ওই তারিখের আগে যদি আম পেঁকে যায়, তাহলে তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়ে আম পাড়তে পারবেন বলেও জানানো হয়েছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, চলতি বছরে ৮ হাজার ৫শ’হেক্টর জমিতে বাগান আম চাষ হয়েছে । এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে উপজেলায় এ বছর প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। তার আগের বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, অসময়ে গাছ থেকে আম নামানোর খবরটি পেয়ে গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) উপজেলার চন্ডিপুর এলাকার আনিসুরের আড়ৎ ঘর থেকে ২০০ কেজি অপরিপক্ক আম জব্দ করেন। তবে এবছর গাছ থকে আম নামানোর বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের আওতায় না এনে জনস্বার্থে আমগুলো জব্দ করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তবে কেউ অপরিক্ক আম বাজারজাত করণের চেষ্টা করলে অভিযান অব্যাহত থাকবে ।
এমআর