বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. প্লাবন হালদারের চিকিৎসা মনঃভূত না হওয়ায় হেনস্তা করেছে উপজেলা বিএনপির এক নেতা। হেনস্তার প্রতিবাদ করায় চিকিৎসা নিতে আসা এক নারী রোগীর বোনকে প্রকাশ্যে চর থাপড় মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় শনিবার (১২ জুলাই) সকালে গৌরনদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টুর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী বিথী আক্তার (৩২)।
হেনস্তার শিকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডা. প্লাবন হালদার বলেন, ‘শুক্রবার হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ওই দিন দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বদিউজ্জামান মিন্টু কয়েকজনকে সহযোগীকে নিয়ে জরুরি বিভাগের ৮নং কক্ষে আসেন।
এ সময় মিন্টু জানান, গত তিনদিন আগে মোটর সাইকেলে তার পা কেটে গেছে। তার কথা শুনে আমি তাকে টিটেনাস ইনজেকশন পুশ করার পরামর্শ দিয়ে একটি ব্যবস্থাপত্র দেই। এতে তার মনঃভূত না হওয়ায় বিরুপ মন্তব্য করে ব্যবস্থাপত্রটি ছিঁড়ে আমার টেবিলের উপর ছুড়ে মারেন। তখন আমি বলি এসব লোকজন আসে কোথার থেকে। এতে মিন্টু ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে একাধিকবার মারতে উদ্যত হলে আমি পিছনে সরে দাঁড়াই। কক্ষে উপস্থিত এক নারী রোগীর সাথে থাকা তার বোন বাঁধা দিতে গেলে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে।
মারধরের শিকার আশোকাঠি গ্রামের বিথী আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আমার বড়বোন মুক্তা বেগমকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে শুক্রবার দুপুরে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. প্লাবন হালদারের ৮নং কক্ষে যাই। এ সময় একজন লোক পা কাটার বিষয় নিয়ে ডা. প্লাবনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি ডাক্তারের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেন। আমি বাধা দিয়ে বলি, ভাই তিনি একজন সরকারি ডাক্তার, আমাদের সেবা দিচ্ছেন, তাকে অযাথা মারবেন কেন। এ কথা বলতেই তিনি (মিন্টু) আমাকে প্রকাশ্যে ডান গাল, কান ও মাথায় একাধিকক চড়থাপ্পড় মারেন এবং আমাকে ও আমার বোনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি এর বিচার চাই’।
ডাক্তারকে হেনস্তা ও নারীকে মারধোরের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন। আপনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন তাহলে বিস্তারিত জানতে পারবেন’।
তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব বলেন, ‘দল কখনো এমন আচরণ বরদাশত করে না। আমি হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। একটি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তারপরও যা হয়েছে তা আমাদের কাম্য নয়। আমরা বসে বিষয়টি সমাধান করবো’।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ কর্তব্যরত অবস্থায় একজন চিকিৎসকের সঙ্গে রূঢ় আচরণ এবং চিকিৎসায় বাধা প্রদান করা গুরুতর অপরাধ। আমরা বিষয়টি সিভিল সার্জন সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘বিথী আক্তার নামে এক নারী তাকে মারধর করার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টুর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
উল্লেখ্য, অতি সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে তার সম্মুখে এক মুসুল্লীকে মারধর করে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু।
এসকে/এইচএ