চলমান আগস্ট মাসকে ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় 'পার্টি নিরাপত্তা' জোরদারে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে মিরপুর থানা পুলিশ। বিশেষ করে রাতের বেলায় নগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার সরাসরি মাঠে কাজ করছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এরই অংশ হিসেবে দিবাগত গভীর রাতে মিরপুর এলাকায় নিয়মিত টহলের পাশাপাশি মিরপুর মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী পাহারাদারদের মাঝে বাঁশি, লাঠি ও নিরাপত্তামূলক বিশেষ সুরক্ষা জ্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, চলমান আগস্ট মাসকে ঘিরে সম্ভাব্য জঙ্গি তৎপরতা, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও গুপ্ত হামলার আশঙ্কা থেকে রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, মোড়, বাজার, মাজার এলাকা, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভিড়পূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট। রয়েছে সাদা পোশাকে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থাও।
মিরপুর এলাকায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী পাহারাদারদের মাঝে বিশেষ সুরক্ষা জ্যাকেট বিতরণের কারণ উল্লেখ করে মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাত রোমান বলেন, সম্প্রতি মিরপুরে একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। প্রকৃত ঘটনা কী? এটা কি অগ্নিসংযোগের ঘটনা নাকি দুর্ঘটনা? এ ঘটনার প্রকৃত কারণ উৎঘাটন, অগ্নিসংযোগকারীদের সংশ্লিষ্টতা ও চিহ্নিতকরণে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তকালে আমরা স্থানীয় নাগরিকবৃন্দ, পরিবহন মালিক-চালক-শ্রমিক ও নিয়োজিত পাহারাদারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়োজিত পাহারাদারদের জন্য বাঁশি, লাঠি ও বিশেষ ধরণের সুরক্ষা জ্যাকেট বিতরণ ফলপ্রসু ভূমিকা রাখতে পারে। নাশকতাকারী, সন্ত্রাসী কিংবা দুর্বৃত্তরা বিশেষ পোশাক দেখে যেন বুঝতে পারে এ অঞ্চলে বাড়তি নিরাপত্তা ও পাহারার ব্যবস্থা আছে। ফলে তারা অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে সাহস করবে না। সেবিষয়টি লক্ষ্যে রেখেই মাননীয় ডিসি স্যারের নির্দেশে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পাহারাদারদের মাঝে বাঁশি, লাঠি ও বিশেষ ধরণের সুরক্ষা জ্যাকেট বিতরণ করা হলো।
এসময় ওসি বলেন, 'আগস্ট মাসে অতীতে যেভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নাশকতা দেখা গেছে, সে অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ আগে থেকেই সতর্ক। ডিএমপি কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশনায় মিরপুর বিভাগের ডিসি স্যারের সরাসরি নেতৃত্বে প্রতিটি এলাকায় বহুগুণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরবিচ্ছিন্ন টহল ও বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পুরো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে গোটা মহানগরী।'
পুলিশের ব্যতিক্রমী এমন নিরাপত্তা উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। মিরপুরের সাধারণ মানুষও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, সার্বিকভাবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দেখা যাচ্ছে বাড়তি পুলিশি টহল, চেকপোস্ট ও নিরাপত্তা জোরদার। 'পুলিশ এভাবে মাঠে থাকলে আমরা অনেক বেশি নিরাপদ বোধ ও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে সাহস পাবো নগরবাসী।'
এসময় ওসি উপস্থিত জনতা ও এলাকাবাসীর প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, 'নিরাপত্তা শুধু পুলিশের একার দায়িত্ব নয়; সকলের অংশগ্রহণ ভিত্তিক যৌথ দায়িত্ব। আমরা মাঠে আছি, আপনারাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সচেতন থাকুন। অসংগতি কিংবা সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লেই দ্রুত স্থানীয় পুলিশকে জানান। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সকল ধরণের আইনী সেবা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ মিরপুর মডেল থানা পুলিশ এবং ওসি হিসেবে আমার দরজা আপনাদের জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা রইলো। বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবায় ৯৯৯-এ ফোন করে অবহিত করুন।'
পরিশেষে, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে পুরো আগস্ট মাসজুড়ে মিরপুরে বাড়তি পুলিশি টহল, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি, গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও পয়েন্টে চেকপোস্ট এবং রাতভর ভিজিল্যান্স কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এসআর