ভারতীয় দুই নাগরিক তথ্য গোপন ও জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) গ্রহণ করায় তাদেরসহ মোট ৯ জনের নামে মামলা করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৫ আগস্ট) বোদা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রেজওয়ানুল হক মন্ডল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নোয়াখালী এলাকার মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান ও নাসিরকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের দাবি, মিরাজ ভারতীয় নাগরিকদের কাছে জমির দলিল সম্পাদন করে আদালতে মামলা করেছিলেন এবং প্রায়ই পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন।
মামলার আসামিরা হলেন— ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি থানার পশ্চিম মাগুরমারী গ্রামের মৃত জলধর রায়ের দুই ছেলে ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান (৭৫) ও বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধান (৭১), দেবীগঞ্জের টেপ্রীগঞ্জ কাদেরের মোড় এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মোস্তফা কামাল (৪২), মারেয়া বামনহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম, ইউপি সদস্য মনছুর আলী, ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী নুর ইসলাম, গ্রাম পুলিশ দীনবন্ধু, বোদার মারেয়া নতুন বস্তি এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে জালাল হাজী (৫৫) এবং বারপাটিয়া এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মজনু (৪০)।
জানা গেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের এনআইডি করার খবর প্রকাশের পর দেবীগঞ্জের নাজমুল ইসলাম বাপ্পি সংবাদ কাটিংসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে বোদা থানায় মামলা হয়।
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, মৃত জলধর রায়ের পৈত্রিক বাড়ি ছিল দেবীগঞ্জের গাজকাটি খারিজা ভাজনি গ্রামে। স্বাধীনতার আগে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সম্পত্তি বিরোধে তিনি খুন হলে তার তিন ছেলে ভারতে চলে যান। এদিকে তার মেয়ে নমিতা রানী রায় স্থানীয়ভাবে বিয়ে করে এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে মারা যান। তার ছেলে উত্তম কুমার রায় উত্তরাধিকারসূত্রে বিশাল সম্পত্তির মালিক হলেও তা পরবর্তীতে বিক্রি করেন।
মোস্তফা কামাল ২০২২ সালে ওই সম্পত্তি লিজ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। পরে জানতে পারেন, জমি ভবেন্দ্র নাথ ও বজেন্দ্র নাথ রায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া জমি বিক্রি সম্ভব নয় বলে তাদের এনআইডি তৈরির উদ্যোগ নেয় মোস্তফা। এ কাজে তিনি জালাল হাজীসহ ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারী নুর ইসলাম, গ্রাম পুলিশ দীনবন্ধু ও পিয়ন মজনুকে নিয়ে জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে কাগজপত্র জমা দেন। এর ভিত্তিতেই ভারতীয় দুই নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়।
বোদা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার বাদী মো. রেজওয়ানুল হক মন্ডল জানান, মামলায় নাম উল্লেখিতদের পাশাপাশি আরও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তদন্তে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এইচএ