হোটেলের রুম, স্পা সেন্টার, পাবলিক টয়লেট বা শপিংমলের ট্রায়াল রুমে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করছে ভিডিও। এরপর তা দিয়ে নারীদের নানাভাবে হয়রানি করে কিছু খারাপ মানুষ। হোটেল হোক বা ড্রেসিং রুম, লুকানো ক্যামেরা রাখা এই যুগে এনিয়ে দুশ্চিন্তা অমূলক কিছু নয়। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে কীভাবে অসাধু কাজ করা যায় তারই নিদর্শন গোপন ক্যামেরা।
একটু বুদ্ধি খাটালেই গোপন ক্যামেরা খুঁজে বের করতে পারবেন। গোপন ক্যামেরা যতই ছোট হোক তা লুকানো সহজ নয়। সাধারণত হোটেল রুম বা ট্রায়াল রুমের বৈদ্যুতিক পণ্য, নাইট লাইট, বই, ডিভিডি, পেন, খেলনা, ঘড়ি, শোপিস, আয়না, স্মোক ডিটেক্টরের মধ্যে লুকানো ক্যামেরা থাকতে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৮ শতাংশ মানুষ গোপন ক্যামেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ হোটেল বা ভাড়া বাসায় প্রবেশের পর ক্যামেরা আছে কি না খুঁজে দেখেছেন। বাংলাদেশেও গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণের ঘটনা নতুন নয়। তাই ভ্রমণ বা অবস্থানের সময় নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায় জানা অত্যন্ত জরুরি।
সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি এক পরীক্ষায় দেখায়, একটি বাড়িতে ২৭টি গোপন ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। অন্য একটি দল নানা উপায়ে ক্যামেরা খোঁজা শুরু করে। প্রথমে খালি চোখে তাকিয়ে একটি ক্যামেরা শনাক্ত করতে পারে দলটি। এরপর মুঠোফোনের সফটওয়্যার, আধুনিক লেন্স ইত্যাদি প্রযুক্তির সাহায্যে ধরা পড়ে আরও ১৬টি ক্যামেরা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত সব উপায় দিয়ে চেষ্টা করেই এই ফলাফল পাওয়া গেছে। তবে কিছু সহজ কৌশল কাজে লাগালে অনেক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। আসুন সেগুলো জেনে নেই-
১. সন্দেহজনক যেকোনো কিছু যাচাই করুন
হোটেল কিংবা অপরিচিত কোথাও দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হলে প্রথমেই চারদিক ঘুরে দেখুন। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লেই যাচাই করুন। ক্যামেরা বসানো আছে কি না, নিশ্চিত হোন। বিশেষ করে শৌচাগার, ঘরের দেয়ালঘড়ি, কলমদানি, দেয়ালে টানানো ছবি, চার্জিং পোর্ট ইত্যাদি পরখ করে নিতে ভুলবেন না। কোনো বস্তু সাধারণত যেখানে থাকার কথা, সেখানে না থাকাটাও সন্দেহজনক। এ ছাড়া পোশাক কিনতে গিয়ে ট্রায়াল কক্ষে অনেকেই পোশাক পরিবর্তন করেন। তখনো ওপরে–নিচে তাকিয়ে লুকানো ক্যামেরার বিষয়টি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
২. আয়নার কারসাজি
যেকোনো ধরনের আয়নার মধ্যেও ক্যামেরা লুকানো থাকতে পারে। তবে সহজেই এটি যাচাই করতে পারেন। আয়নায় আপনার আঙুল রাখুন। আয়নায় আঙুলের প্রতিচ্ছবির সঙ্গে আপনার আঙুলের মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা আছে কি না লক্ষ করুন। ফাঁকা থাকলে এটি আসল আয়না, অন্যথায় এটা দুমুখো আয়না হতে পারে। ভেতরে থাকতে পারে ক্যামেরা। এ ছাড়া আয়নার পেছনের দিকটিও দেখুন। যদি পেরেকে আটকানো বা ঝুলিয়ে রাখা আয়না হয়, তাহলে সমস্যা নেই। যদি দেয়ালের সঙ্গে স্থায়ীভাবে লাগানো থাকে, তাহলে একটু সাবধান হওয়াই ভালো।
৩. আলো ও অন্ধকারের পরীক্ষা
প্রথমেই ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিন। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশে চারদিকে তাকান। কিছু কিছু গোপন ক্যামেরায় ছোট এলইডি লাইট থাকে। এগুলো মিটিমিটি জ্বলে বা উজ্জ্বল দেখায়। এ রকম কিছু থাকলে আপনার চোখে পড়বে। অন্ধকার ঘরেই আরেকটি পরীক্ষা করতে পারেন। লুকানো ক্যামেরার লেন্স থেকে অনেক সময় সূক্ষ্ম নীল বা বেগুনি রঙের আভা বের হয়। টর্চলাইট জ্বালালে এই আভা ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই দুটি পদ্ধতি বেশ কার্যকরী।
৪. ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক স্ক্যান করুন
কিছু ক্যামেরা চালু রাখার জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়। সাধারণত কাছের কোনো রাউটার থেকেই দেওয়া হয় এই সংযোগ। হতে পারে আপনার ও ক্যামেরায় ব্যবহৃত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক একই। সে ক্ষেত্রে মোবাইলে নেটওয়ার্ক স্ক্যানিং সফটওয়্যার ডাউনলোডে যাচাই করে দেখতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, যে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কটি স্ক্যান করতে চাচ্ছেন, আপনিও যেন সেটিতেই যুক্ত থাকেন। যদি দেখেন, ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের তালিকায় ‘আইপিক্যামেরা’ বা এ ধরনের নাম আছে, তাহলে এই বাসায় ক্যামেরা থাকার সম্ভাবনা আছে বলে ধরে নিতে পারেন।
৫. স্মার্টফোনের সফটওয়্যারও কাজে দেয়
ইন্টারনেটে খুঁজলেই এখন ‘হিডেন ক্যামেরা ডিটেক্টর’ (লুকানো ক্যামেরা শনাক্তকরণ) নামের অনেক অ্যাপ পাওয়া যায়। এসব অ্যাপ ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মুঠোফোনের অ্যাপ স্টোরকে ভরসা করাই ভালো। ওয়াইফাই স্ক্যানিং, ব্লুটুথ স্ক্যানিং, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিসহ একাধিক কৌশল খাটিয়ে এই অ্যাপগুলো কাজ করে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই লুকিয়ে রাখা ক্যামেরা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়।
এসকে/আরআই