কক্সবাজারের উখিয়ার জাফরপল্লান পাড়ার প্রায় ২শ' পরিবারের জীবন চলছে এক টুকরো সরু ও নাজুক পথের ওপর ভর করে। বর্ষা এলেই এই পথ কাদা-মাটিতে পরিণত হয়। যা প্রতিদিন স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার মানুষজন হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
অন্য গ্রামের স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা পাকা সড়ক ধরে ঝকঝকে ইউনিফর্মে স্কুলে পৌঁছে যায় ঠিক সময়ে। কিন্তু এই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া মানেই এক কঠিন যাত্রা—কাদা, পানি আর সরু মাটির বাঁধ পেরিয়ে জীবন বাজি রেখে চলা। এমন নির্মমতার দৃশ্য দেখা গেছে উখিয়া রত্নাপালং ইউনিয়নের জাফরপল্লান পাড়া নামক এলাকাটিতে।
২৬ আগস্ট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস পরে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে কাদা-মাটিতে ভিজে যাচ্ছে। এক হাতে বই, অন্য হাতে ভিজে না যাওয়ার জন্য কাপড় সামলানো। কারও হাতে ছাতা, কেউ আবার খালি মাথায়। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখে, পা পিছলে পড়ার ভয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ যেন অনিশ্চিত এক লড়াই।
গ্রামের মানুষের কষ্টের কথাও আলাদা কিছু নয়। এই পথই ভরসা ২শ’ পরিবারের। কারও অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য বের হওয়া মানেই দুর্ভোগ। বাজারে যেতে হলেও একই অবস্থা। বিশেষ করে বর্ষা এলে এই কষ্ট আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। হাঁটতেই কষ্ট, আর গাড়ি তো দূরের কথা।
জানা গেছে, জাফরপল্লান পাড়াবাসীর একমাত্র চলাচলের পথটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির ওপর হওয়ায় প্রসস্ত করা যাচ্ছে না। এলাকার মানুষ একাধিকবার চেষ্টা করেছে পাকা রাস্তা নির্মাণের। কেউ কেউ জায়গা দিতে রাজি হলেও অনেকে দেননি। আর সেই অচলাবস্থার বোঝা বইতে হচ্ছে পুরো গ্রামের মানুষকে।
ভালুকিয়া স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, 'অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী আছে এই গ্রামে। কিন্তু শুধু কষ্টকর যাতায়াতের কারণে তারা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। অনেকেই মাঝপথে পড়ালেখা ছেড়ে দেয়।'
জাফরপল্লান পাড়ার মানুষের স্বপ্ন খুব ছোট—একটা টেকসই রাস্তা। যাতে বাচ্চারা নিরাপদে স্কুলে যেতে পারে, অসুস্থ মানুষকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যায়, আর জীবনধারার প্রতিটি কাজে না হয় একটু স্বস্তি মেলে।
গণ অধিকার পরিষদের নেতা তারেক বলেছেন, 'বর্ষাকালে এ পথে চলাফেরা করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে যায়। স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া—সবকিছুতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।'
বিশেষ করে বর্ষাকালে দুর্দশার মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণে। বৃষ্টির পানি জমে কাদা হয়ে গেলে পথ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। ফলে শিক্ষার্থী, কৃষক, নারী, বৃদ্ধ—সবাইকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। যেহেতু সড়কটি আমার গ্রামের তাই আমি প্রতিনিয়ত এই দৃশ্য দেখে আসছি।
রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে সড়কটি এখনো প্রসস্ত ও টেকসই করা সম্ভব হয়নি। এসব সমস্যা সমাধান হলে দ্রুত রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উখিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, 'সড়কের জায়গা নিয়ে কোনো বিরোধ না থাকলে এলজিইডির পক্ষ থেকে সড়কটি টেকসই করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
এইচএ