আপনার ধারণার চেয়েও বেশি আয়ু কমিয়ে দেয় সিগারেট। সিগারেটের ক্ষতি সম্পর্কে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সিগারেট একজন মানুষের জীবন থেকে ২০ মিনিট কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ধূমপায়ীদের ওপর করা এক গবেষণায় এমনটিই দেখা গেছে।
সামাজিক ও আর্থিক অবস্থাসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ‘র গবেষকরা জানিয়েছেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি সিগারেট আয়ু কমায় প্রায় ১৭ মিনিট, আর নারীদের ক্ষেত্রে প্রায় ২২ মিনিট। অর্থাৎ, গড়ে একটি সিগারেট একজন মানুষের জীবন থেকে ২০ মিনিট কেড়ে নেয়। যার মানে ২০টি সিগারেটের একটি প্যাকেট একজন মানুষের আয়ু প্রায় সাত ঘণ্টা কমিয়ে দিতে পারে।
বিশ্লেষণ বলছে, একজন ধূমপায়ী যদি ১ জানুয়ারি দিনটিতে ১০টি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেন, তাহলে ৮ জানুয়ারির মধ্যে তিনি পুরো একটি দিনের জীবন হারানো ঠেকাতে পারেন। আর জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে আগামী ৫ আগস্ট সিগারেট পর্যন্ত বন্ধ থাকলে পুরো এক মাস আয়ু বাড়তে পারে। আর পুরো বছর এভাবে ধূমপান ছাড়া থাকলে তারা ৫০ দিনের আয়ু কমে যাওয়া এড়াতে পারেন।
ইউসিএল'র অ্যালকোহল অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ গ্রুপের প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ড. সারাহ জ্যাকসন বলেন, মানুষ সাধারণত জানে যে ধূমপান ক্ষতিকর, কিন্তু তারা এটিকে অবমূল্যায়ন করে। গড় হিসাবে ধূমপায়ীরা যারা জীবনভর এটি চালিয়ে যান, তারা প্রায় ১০ বছর আয়ু হারান।
তিনি আরও বলেন, ধূমপানের কারণে শুধু জীবনের সেই শেষ সময়টুকুই কমছে না, জীবনের মাঝামাঝি সুস্থ সময়ও কমিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ, যে আয়ু কমার কথা বলছি, সে সময়টুকু তারা হারাচ্ছেন তা আসলে তুলনামূলক সুস্থ সময়ের মধ্যেই।
এই গবেষণা করেছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা বিভাগ। তারা ব্যবহার করেছে দুটি বড় তথ্যভাণ্ডার—ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি থেকে পুরুষদের তথ্য এবং মিলিয়ন উইমেন স্টাডি থেকে নারীদের তথ্য। উভয় ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যারা সারা জীবন ধূমপান করেছেন তাদের আয়ু গড়ে ধূমপান না করা মানুষের তুলনায় প্রায় ১০ বছর কম।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, ধূমপায়ীদের আয়ু সাধারণত ধূমপান না করা মানুষের তুলনায় কমপক্ষে ১০ বছর কম।
নতুন এই ব্রিটিশ গবেষণায় বলা হচ্ছে, ধূমপানের ক্ষতি আসলে ধীরে ধীরে জমতে থাকে। আর ধূমপান ছাড়ার পর কতটা আয়ু ফিরে পাওয়া যাবে, তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর— যেমন বয়স ও কত বছর ধরে কেউ ধূমপান করেছেন।
ড. জ্যাকসন বলেছেন— কেউ যদি যুবক বয়সে (২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে) ধূমপান ছাড়ে, তাহলে তাদের আয়ু প্রায় ধূমপান না করা মানুষের সমান হয়। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধূমপান ছাড়লেও হারানো কিছুটা সময় আর ফিরে পাওয়া যায় না।
তিনি একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলেন, কেউ যদি প্রতিদিন ১০টি সিগারেট খান এবং মাসের শুরুতেই ধূমপান ছেড়ে দেন, তবে ৭ দিন পর তিনি এক দিনের আয়ু হারানো থেকে বাঁচতে পারবেন। এভাবে করে বছরের শেষে প্রায় ৫০ দিন আয়ু হারানো এড়াতে পারবেন।
ড. জ্যাকসন পরামর্শ দিয়ে বলেন, ধূমপান বন্ধ করা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ। যত তাড়াতাড়ি ছাড়া যাবে, তত দীর্ঘ জীবন পাওয়া যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যদিও ১৯৬০-এর দশক থেকে ধূমপানের হার কমছে, তবুও এখনো ধূমপান যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। প্রতি বছর সেখানে ৪ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ধূমপানের কারণে মারা যায়। তবে ৪০ বছরের আগে ধূমপান ছাড়তে পারলে ধূমপান-সম্পর্কিত রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৯০% কমে যায়।
অন্যদিকে, নেচার জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ধূমপান মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এতে সংক্রমণ, ক্যানসার বা অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যত বেশি ধূমপান, তত বেশি ক্ষতি হয় ইমিউন সিস্টেমে।
তবে ভালো খবর হলো, ধূমপান ছাড়লে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করে, যদিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। ওই গবেষণার সহ-লেখক ডা. ড্যারাহ ডাফি বলেন— ধূমপান শুরু করার মতো সময় কখনোই ভালো নয়। তবে যদি ধূমপায়ী হন, তবে ছাড়ার সেরা সময় হলো এখনই।
এমআর-২