কক্সবাজারের উখিয়ার গ্রামের চারপাশজুড়ে এখন চোখে পড়ছে সবুজের সমারোহ। ফসলি মাঠজুড়ে দুলছে সোনালী ভবিষ্যতের প্রতীক নানা জাতের ধানের চারা। মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে ধান চাষে আশার আলো দেখছেন এখানকার কৃষকরা।
মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানের আবরণ কৃষকের চোখে ভরসা ও মনে জাগাচ্ছে নতুন স্বপ্ন। একসময় শুকনো ফেটে যাওয়া জমিগুলো এখন সবুজের কার্পেটে মোড়ানো। যেদিকে চোখ যায়, শুধু ধানের চারা। ঝিরঝির বাতাসে দুলে উঠছে আশার গান। যেন প্রকৃতি নিজেই সাজিয়েছে এক রঙিন উৎসব। গেল ২৯ আগস্ট ও আজ শনিবার সকালে কয়েকটি গ্রামে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে উখিয়ার ফসলি মাঠে।
স্থানীয় চাকরিজীবী ও অন্যান্য পেশার মানুষ জানিয়েছেন, এই ধানই তাদের জীবনের ভরসা, সন্তানদের শিক্ষার খরচ, সংসারের চাকা ঘোরানোর মূল চালিকাশক্তি। তাই প্রতিটি চারা রোপণ যেন শুধুই ফসল নয়, একেকটি পরিবারের স্বপ্নকণিকাও।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, কৃষকরা প্রতিটি চারা রোপণের সঙ্গে তারা বুনছেন নিজেদের স্বপ্ন। ভালো ফলন ফলবে, ঘরে হাসি ফুটবে, সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে—এটাই তাদের একমাত্র আশা-ভরসা।
কৃষি কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে আবহাওয়া অনেকটাই অনুকূলে থাকায় ধানের ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হলেও বিক্রির মৌসুমে ন্যায্যমূল্য পাওয়া গেলে লাভবান হবেন কৃষক।
রত্নাপালংয়ের স্থানীয় কৃষক ছৈয়দ আলম বলেন, গতবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু এবার বৃষ্টিও ঠিকঠাক হয়েছে, জমিও উর্বর হয়েছে। তাই আশা করছি ভালো ফলন পাবো।
মোহাম্মদ মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ধান ভালো হয়েছে, কিন্তু বাজারে দাম না পেলে সব পরিশ্রম বৃথা যাবে। তাই সরকারের উচিত কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
আরেক কৃষক বেলাল উদ্দিন বলেছেন, ধানই আমাদের ভরসা। আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি এই মৌসুমের জন্য। এবার মনে হচ্ছে আগের তুলনায় ভালো লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে উখিয়ায় ৯৬৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কামনাশিস সরকার বলেছেন, কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও খবরা-খবর নিতে মাঠে ফিল্ডকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসলে কৃষকরা ভালো লাভবান হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
কৃষি অফিসের এক ফিল্ডকর্মী জানিয়েছেন, এবারের মৌসুম কৃষকদের জন্য অনেক ইতিবাচক। আবহাওয়া, পানি আর জমির উপযুক্ত পরিবেশ মিলিয়ে ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক সময়মতো সার, বীজ ও কৃষি সহায়তা দেওয়া হলে কৃষকরা এ মৌসুমে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো ফলন পাবেন। এতে দেশের খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে।
এআই