যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি প্রকাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে অনলাইনে এই ‘এপস্টেইন ফাইল’ এর একাংশ প্রকাশ করা হয়।
কমিটির ভাষ্য, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এই নথি প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ জনগণ সরাসরি এগুলো দেখতে পারেন।
প্রকাশিত ৩৩ হাজার ২৯৫ পৃষ্ঠার ডিজিটাল নথিতে রয়েছে এপস্টেইনের বিমান ভ্রমণের বিস্তারিত তালিকা, আদালতের নথিপত্র, সিসিটিভি ভিডিও, অডিও রেকর্ড, ই-মেইলসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল উপাত্ত। তবে এর বেশিরভাগই পূর্বে কোনো না কোনোভাবে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় পক্ষের।
এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, প্রকাশিত এই নথিতে নতুন কিছু নেই। অনেক আগে থেকেই এসব তথ্য জনসমক্ষে এসেছে। তা ছাড়া, ঠিক কতটা তথ্য গোপন রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেননা, এর আগে বিচার বিভাগ জানিয়েছিল, এপস্টেইনের 'গ্রাহক তালিকা' সংক্রান্ত কোনো নথি তাদের হাতে নেই।
যদিও দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন রয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প, বিল ক্লিন্টন, বিল গেটস, প্রিন্স অ্যান্ড্রু, স্টিফেন হকিং, মাইকেল জ্যাকসন ও গুগলের ল্যারি পেজসহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি এপস্টেইনের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন। তবে এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
প্রকাশিত নথির মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত এপস্টেইনের সেলের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজও। মোট ১৩ ঘণ্টা ৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তার মৃত্যুর আগমুহূর্তের পরিস্থিতি ধরা পড়েছে। এছাড়া আত্মহত্যার ওই রাতেই কারাগারের নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল বলে দাবি করেছিলেন তদন্তকারীরা।
হাউস ওভারসাইট কমিটির চেয়ারম্যান জেমস কমার গত মাসেই নির্দেশ দিয়েছিলেন এই নথি প্রকাশে। তিনি বলেন, ‘নতুন কিছু থাকুক বা না থাকুক, স্বচ্ছতার স্বার্থে এগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।’
এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এপস্টেইনের কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন না। হোয়াইট হাউস থেকেও ট্রাম্প-এপস্টেইনের সম্পর্ক অস্বীকার করা হয়েছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন, যার দাবি প্রায় এক হাজার কোটি ডলার।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন জেফরি এপস্টেইন। কিন্তু ব্যবসার আড়ালে ইতিহাসের অন্যতম বড় যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শিশুদের যৌন নির্যাতন, যৌন ব্যবসার জন্য নারী পাচার, নাবালিকা পাচার ও নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতনের ভয়ঙ্কর অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
বিতর্কের মধ্যে ২০১৯ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ম্যনহাটন জেলের বন্দী থাকাকালীন রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে তার। অনেকেই তার মৃত্যুকে নিছক আত্মহত্যা বলে অভিহিত করেছেন।
এই ধনকুবেরের মামলা সম্পর্কিত নানা ফাইল, ফ্লাইটের তালিকা, কন্ট্যাক্ট লিস্ট বা যোগাযোগের তালিকা, মামলার নথি, সাক্ষীদের দেয়া বয়ান, নানা ফুটেজ- সবকিছু নিয়েই এক সঙ্গে এটিকে এপস্টেইন ফাইল বলা হয়।
আরডি