বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাড়ে ৪ ঘণ্টার আলোচনা হয়।
আলোচনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভায় হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে, আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যেন কোনো ধরনের একাডেমিক বা প্রশাসনিক হেনস্থা না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রদান করা হবে এবং আগামী ৭ দিনের মধ্যে ক্লাস ও পরীক্ষা পুনরায় শুরু করা হবে।
আজ বিকাল ৫টার মধ্যে এই সিন্ডিকেট সভার পর এ বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সভা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে কথা হয় বাকৃবি ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হকের সঙ্গে।
তিনি জানান, ‘গতকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উপাচার্য চেয়েছিলেন আলোচনা বিষয়গুলো লিখিত আকারে সিন্ডিকেট কমিটির নিকট উত্থাপন করতে। যার ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করছে না। এক ঘণ্টা যাবৎ তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার পরও তারা আসেনি। এখন পর্যন্ত এই সভা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই সংকট সমাধানে তাদের এগিয়ে আসতে হবে, তারা কী চাইছে তা জানাতে হবে। তারা এগিয়ে না আসায় এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানের পথ দেখতে পাচ্ছি না। এখন যদি শিক্ষার্থীরা কোনো কর্মসূচিতে যায় এবং ভাঙচুর বা এরকম কিছু করে, সেক্ষেত্রে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করবে। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু বন্ধ, তাই আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের হাতে থাকবে।’
বাকৃবির সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. সোনিয়া সেহেলী জানান, ‘সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসনের হাতে চলে গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আর আমাদের হাতে নেই। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভার জন্য লিখিত ডকুমেন্ট প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষার্থীদের দাবি এবং আমাদের পক্ষের দাবি নিয়ে একটি যৌথ ডকুমেন্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের বারবার ডাকলেও তারা আসেনি। ফলে ডকুমেন্ট তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় উপাচার্যের পক্ষে ডকুমেন্ট ছাড়া সিন্ডিকেট সভা করা সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল বলেন, ‘গতকাল আমরা ৬১ জন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এরপরও আজকে তারা আমাদের মাত্র ৫ জনকে যৌথ বিবৃতির জন্য যেতে বলেছেন। গতকালের দীর্ঘ আলোচনায় আমাদের দাবি ও সিদ্ধান্ত সবই আমরা উল্লেখ করেছি এবং আমাদের স্বাক্ষরও দিয়েছি। এতকিছুর পরেও কেন আবার ৫ জনকে লিখিত দিতে হবে, এটাই বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকালের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে আজ দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্য হল বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার করবেন। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের প্রশাসনিক এবং শিক্ষাগত কোনো হয়রানি করা হবে না—এই মর্মে তিনি লিখিত নথি প্রকাশ করবেন। কিন্তু এর কিছুই হয়নি। শিক্ষকবৃন্দ আমাদের কোনো রকম সহযোগিতা করছেন না। আমাদের একক ডিগ্রির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এখনও পাইনি। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, সেটা নিয়ে অনুষদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’