ধার দেওয়া টাকাটা ফেরত পাওয়া সব সময় সহজ হয় না। টাকা নেওয়ার সময় মানুষটা হয়তো ছিলেন ভীষণ বিনয়ী, অসহায় ভঙ্গিতে ‘বন্ধুত্ব’ জাহির করেছিলেন। কিন্তু ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই যেন উল্টো চেহারা! না ফোন ধরেন, না মেসেজের জবাব দেন—অজুহাতেরও যেন শেষ নেই।
এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এমন অনেকেই আছেন, যারা ধার দিয়ে শুধু টাকাই নয় হারিয়েছেন সম্পর্কটাও। তবে সব পরিস্থিতিতে চিৎকার-চেঁচামেচি বা সম্পর্ক ছিন্ন করা সমাধান নয়। বরং কিছু কৌশল প্রয়োগ করলেই পাওনা ফেরত পাওয়ার পথটা হতে পারে সহজ—সেই সঙ্গে সম্পর্কও বজায় রাখা সম্ভব।
চলুন জেনে নিই, কীভাবে করবেন?
১. প্রথমেই ভদ্রভাবে মনে করিয়ে দিন
প্রথমবারেই রাগারাগি বা অভিযোগ তোলার দরকার নেই। ফোনে বা সামনাসামনি সহজভাবে জিজ্ঞেস করুন, তুমি তো কিছুদিন আগে ধার নিয়েছিলে, এখন কি ফেরত দেওয়া সম্ভব?’
তার কথা মন দিয়ে শুনুন। কেউ কেউ সত্যিই আর্থিক বিপদে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে একটু সময় দেওয়া সম্পর্কের দিক থেকেও ইতিবাচক।
২. সময়সীমা নির্ধারণ করুন
যদি দেখেন, কেবল অজুহাতই আসছে, তাহলে বিনয়ের সুর বজায় রেখে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দিন। উদাহরণস্বরূপ:
‘আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে যদি পারো, তাহলে আমার পক্ষে কিছু জরুরি খরচ সামলানো সহজ হয়। এই সময়সীমা তাকে মানসিকভাবে কিছুটা ‘চাপে’ রাখবে এবং দায়িত্বের অনুভব তৈরি করবে।
৩. প্রয়োজনে কিস্তিতে ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দিন
ধার যদি বড় অঙ্কের হয়ে থাকে, তবে এককালীন ফেরত দেওয়াটা অনেকের পক্ষেই কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাসিক কিস্তির প্রস্তাব দিন। এক্ষেত্রে আপনি তাকে এভাবে বলতে পারেন-‘তুমি চাইলে প্রতি মাসে কিছু টাকা করে দিলেও আমার পক্ষে সহজ হয়।’এতে ঋণগ্রহীতাও মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকবেন এবং সুশৃঙ্খল উপায়ে টাকা ফেরতের পথ তৈরি হবে।
৪. লিখিত প্রমাণ রাখুন
বড় অঙ্কের টাকা বা মূল্যবান কোনো সম্পদ ধার দিলে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করে রাখুন। কত টাকা ধার দেওয়া হয়েছে, কত সময়ের মধ্যে ফেরত দিতে হবে, কোনো সুদ বা জরিমানার শর্ত থাকলে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে লিখিত চুক্তি করা যেতে পারে। এতে ঋণগ্রহীতার দায়িত্ববোধ জাগাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আইনি সহায়তা দরকার হলে এটি হবে আপনার প্রমাণ।
৫. সম্পর্কটাও মূল্যবান, তাই ধৈর্য ধরুন
সবাই এক রকম নন। কারও সত্যিই সমস্যা থাকতে পারে, কেউ আবার ইচ্ছা করেই ফাঁকি দেন। তবে আপনি প্রথমেই যদি ধৈর্য ধরে, পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যান—তাহলে টাকাও ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আবার সম্পর্কও নষ্ট হয় না।
টাকা ধার দেওয়া একটি সামাজিক বাস্তবতা। কিন্তু সেই টাকাটা ফেরত পাওয়াটাও আপনার অধিকার। আর সেই অধিকার আদায়ে কৌশল, সংবেদনশীলতা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ—এই তিনটি জিনিসই সবচেয়ে জরুরি।
তবে একটি কথা মনে রাখুন, প্রথমবার কেউ ফেরত না দিলে, দ্বিতীয়বার ধার দেওয়ার আগে দশবার ভাববেন।