দীর্ঘ এক বছর ধরে যশোরের কোন সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনাম (সাপে কামড়ের প্রতিষেধক ওষুধ) নেই। সরকারিভাবে সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।
অ্যান্টিভেনামের অভাবে বিষধর সাপের কামড়ে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। গত ৫ দিনে যশোরে সাপের কামড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নের ডাঙ্গাবয়রা গ্রামের জুয়েল রানার স্ত্রী তামান্না খাতুন (২০) ও মণিরামপুর উপজেলার বিজয়রামপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আজিম (৩)।
জানা গেছে, যশোরে সাপে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ৮ মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৭ জন সাপে কামড়ানো রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সাপের কামড়ের রোগী বাড়লেও অ্যান্টিভেনাম না থাকায় মানুষের মাঝে হতাশা বেড়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসার ওপর আস্থা হারিয়ে মানুষ ঝাড়ফুঁকের জন্য ওঝার বাড়িতে ছুটছেন।
সূত্র জানায়, সরকারিভাবে অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিভেনাম কিনে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের ভাষ্যমতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সাপে কামড়ের রোগীর চিকিৎসা নেই বললেই চলে। সেখানে রোগী নেয়া হলেই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
ডাঙ্গাবয়রা গ্রামের জুয়েল রানা জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে বিষধর সাপ তার স্ত্রী তামান্নার বাম হাতের আঙুলে কামড় দেয়। তার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলে সাপে কামড়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারেন। প্রতিবেশীদের সহায়তায় তামান্নাকে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নেয়া হয়। ঝাড়ফুঁকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বেলা সাড়ে ৯ টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তামান্নাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে মণিরামপুর জয়রামপুর গ্রামে সাপের কামড়ে মারা যায় আজিম নামের ৩ বছরের এক শিশু। শিশুর পিতা আব্দুর রহমান জানান, তিনি স্বপরিবারে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে তারা ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়ে ছিল। এসময় বিষধর সাপে তার মেয়ে হালিমা (৮) ও ছেলে আজিমকে (৩) কামড় দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে অ্যান্টিভেনাম না থাকায় চিকিৎসক তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। উপায় না পেয়ে তাদের চালকিডাঙ্গা গ্রামের এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার পর আজিমের মৃত্যু হয়। পরে হালিমাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আব্দুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অ্যান্টিভেনামের অভাবে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। যথা সময়ে সঠিক চিকিৎসাসেবা পেলে হয়তো তার শিশু সন্তান বেঁচে যেতো।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক জানান, সরকারিভাবে অ্যান্টিভেনাম সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এখন অ্যান্টিভেনাম নেই। অ্যান্টিভেনাম সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ফের চাহিদাপত্র পাঠানো হবে।
এনআই